দক্ষ কর্মী নিয়োগ বৃদ্ধি ও অধিকারের সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি সই

সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে দুই দেশের সরকার একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির লক্ষ্য কর্মী ও নিয়োগকর্তা উভয়ের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত করার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সাধারণ কর্মী নিয়োগ-সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই হলো। ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগ ও ২০২২ সালে দক্ষতা যাচাই-সংক্রান্ত দু'টি বিশেষ চুক্তি সই হলেও দুই দেশের মধ্যে সাধারণ কর্মী নিয়োগ-সংক্রান্ত কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি ছিল না।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রিয়াদে চুক্তিটিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সৌদি আরবের পক্ষে দেশটির মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার আহমদ বিন সুলাইমান আল-রাজি।
বৈঠকে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে নিয়োগ চুক্তিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, ইকামা (বসবাসের অনুমতিপত্র) নবায়নের দায়িত্ব নিয়োগকর্তার ওপর অর্পণ এবং দেশে ফিরতে ইচ্ছুক কর্মীদের এক্সিট ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুততর করা।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী আল-রাজি এসব সমস্যা দ্রুত সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে তিনি নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল অভিবাসন নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে সহযোগিতা বাড়ানো এবং প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অভ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি নোমান চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, 'চুক্তিটা আরও আগেই হওয়া উচিত ছিল। বিশেষভাবে সৌদির নিয়াগকর্তাদের সাথে আমাদের কর্মীদের ন্যূনতম বেতন নিয়ে একটা টানাপোড়েন আছে। এছাড়া সময়মতো ইকামা না পাওয়া, প্রত্যাবাসন, আহত বা নিহত হলে প্রাপ্য টাকা ও সম্মানসহ দেশে পাঠানো—এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে সংরক্ষিত হতে হবে।'
'এখন চুক্তির ফলে কর্মীদের অধিকার আদায়ে সুবিধা হবে,' বলেন তিনি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়া প্রায় ৪৫ লাখ কর্মীর মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশই গেছেন সৌদি আরবে।
তবে বিপুলসংখ্যক কর্মী সৌদি আরবে গেলেও তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি অদক্ষ বা স্বল্প-দক্ষ কাজে নিযুক্ত।
আনঅফিশিয়াল হিসাব অনুসারে, বর্তমানে ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে কাজ করছেন। এর ফলে দেশটি বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একক বৃহত্তম শ্রমবাজারে পরিণত হয়েছে।