শপিং ব্যাগের মূল্য নেওয়া বন্ধে আড়ংকে আইনি নোটিশ

ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ংকে কাগজের শপিং ব্যাগের মূল্য নেওয়া বন্ধে কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নিশাত ফারজানা প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মগবাজার আউটলেটের স্টোর ম্যানেজার বরাবর আজ সোমবার এ নোটিশ পাঠিয়েছেন।
নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ব্যাগের বিপরীতে মূল্য নেওয়া বন্ধ না করলে বেআইনি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালত ও কর্তৃপক্ষের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, অনেক বছর ধরে আড়ং থেকে কেনাকাটা করে আসছি এবং প্রত্যেক কেনাকাটায় তাদের নিজস্ব লোগোযুক্ত কাগজের ব্যাগ পেতাম। সম্প্রতি কেনাকাটার পর মগবাজার আউটলেটে বিল পেমেন্ট করতে গিয়ে জানতে পারি প্রোডাক্টের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে না। কারণ হিসেবে জিজ্ঞেস করলে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে আড়ং শপিংয়ের সঙ্গে ব্যাগ দেওয়া হয় না। অর্থাৎ কেনাকাটা করলে আগে কাগজের যে ব্যাগ ফ্রিতে পাওয়া যেত, সেই ব্যাগগুলোই এখন টাকা দিয়ে কিনতে হবে এবং বিল পেমেন্ট বুথে 'আপনার প্রিয় আড়ং ব্যাগ এখন আরও অর্থবহ' এ রকমভাবে একটি লিফলেট দিয়ে গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে, আড়ং শপিং ব্যাগের ওপর সীমিত চার্জ প্রযোজ্য এবং ব্যাগ বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থের পুরোটাই ব্যয় করা হবে স্থানীয় গাছ লাগানোর প্রকল্পে।
এ রকম বিজ্ঞাপন আড়ংয়ের মতো আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান থেকে কোনোভাবেই কাম্য নয় উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, সবুজায়নের এমন উদ্যোগকে বাংলাদেশের মানুষ সাধুবাদ জানায়। তবে সেটা পণ্য বিক্রির লাভ থেকে করলে আড়ং প্রশংসিত হবে এবং অন্যান্য করপোরেট প্রতিষ্ঠানও এসব বিষয়ে সচেতন হবে। এ রকম নিম্নমানের কাগজের শপিং ব্যাগ দিয়ে গ্রাহকের কাছ থেকে মূল্য নিয়ে পরিবেশ রক্ষার কথা বলা এক ধরনের চাঁদাবাজি, জোরপূর্বক আদায় এবং অসাধু ব্যবসায়িক মানসিকতার পরিচয় বহন করে।
নোটিশে আরও বলা হয়, আড়ং দেশের সবচেয়ে বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর একটি। তাদের দেওয়া ব্যাগের কাগজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের। ব্যাগগুলো রিসাইকেল পেপার, অর্থাৎ এই কাগজগুলো একবার ব্যবহৃত হওয়ার পর মেশিনের মাধ্যমে প্রসেসিং করা হয় এবং দ্বিতীয়বার ব্যবহার উপযোগী করা হয়। কেনাকাটার শেষে বাসায় আসার পরপরই ব্যাগ ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সুতরাং এ মানের ব্যাগ মূল্য দিয়ে কিনতে হবে, বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অযৌক্তিক এবং গ্রাহক গ্রুপের জন্য এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি করে।
নোটিশে আইনজীবী বলেন, ব্যাগের মূল্য সংযোজন করার আগে আধুনিকতা এবং সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটলে ক্রেতা মূল্য দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। কিন্তু আড়ংয়ের ব্যাগে রয়েছে ব্র্যান্ডের লোগো। সৃজনশীলতার কোনো ছাপ না রেখে ক্রেতাকে একপ্রকার বাধ্য করা এবং প্রতিষ্ঠানের এমন প্রচারণা অনৈতিক। সম্প্রতি আড়ংয়ে 'রিইউজেবল ফেব্রিক ব্যাগস' নামে এক ধরনের শপিং ব্যাগের প্রচারণা শুরু করেছে; যা অতি চড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। ব্যাগগুলোর সাইজ এমন মাপের যাতে শুধু একটি পণ্য নেওয়া যাবে; অর্থাৎ কোনো গ্রাহক যদি একাধিক পণ্য কেনেন, তাকে একাধিক ব্যাগ কিনতে হবে; যা আমাদের মতো সাধারণ আয়ের দেশের মানুষের জন্য এক ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। এ ধরনের ব্যাগ সংস্করণের আগে গ্রাহকদের মতামতের একটি জরিপ পরিচালনা করা উচিত ছিল। বর্তমানে আড়ংয়ের বিভিন্ন আউটলেটে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এ বিষয়ে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে।
তিনি আরও বলেছেন, আড়ংয়ের কাগজের এই শপিং ব্যাগ টেকসই নয়। এ ধরনের ব্যাগের জন্য মূল্য নেওয়া বন্ধ করেতে হবে। আড়ংয়ের এমন কার্যক্রম কখনোই পরিবেশ সচেতনতার বিষয় পরিলক্ষিত হয় না, বরং এটি সরাসরি এক ধরনের অস্বচ্ছ ব্যবসা এবং গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা। এ ধরনের সস্তা মানসিকতা ও স্বেচ্ছাচারিতা আড়ংয়ের মতো ব্র্যান্ডের কাছে থেকে অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক।