৬ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি পর্যটন মহাপরিকল্পনা, আসছে পরিবর্তন

দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে নেয়া মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ ছয় বছরেও বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের (বিটিবি) ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ পরিকল্পনা দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক জটিলতা, করোনা মহামারি এবং সরকার পরিবর্তনের কারণে এখনো অনুমোদন পায়নি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরিকল্পনাটি পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে বিটিবির কাছে পর্যালোচনা জন্য। তবে পর্যালোচনা শেষ হয়নি। বিটিবি সূত্র জানায়, রিভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি দেশের পর্যটন খাতের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য মাস্টার প্ল্যান খুবই প্রয়োজন। মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া উন্নয়ন কার্যক্রম বিচ্ছিন্নভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে হচ্ছে। দ্রুত এটি বাস্তবায়ন না হলে খাতে অব্যবস্থাপনা বাড়বে এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে।
বিটিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহাত ইয়াসমিন টিবিএসকে বলেন, 'পর্যটনের জন্য মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল, যা জমা দেওয়া হয়েছে। এখন এটি জাতীয় পর্যটন কাউন্সিলের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। যাচাই–বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে, কিছু সংশোধন দরকার, সেই কাজ চলছে।'
তিনি আরও জানান, যাচাই–বাছাইয়ের জন্য বিটিবি সিইওকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কয়েকটি বৈঠক করেছে, আরও হবে। দ্রুত চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য পাঠানোর চেষ্টা চলছে। তবে কত সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
নতুন পরিবর্তনের আভাস
বিটিবি সূত্র জানায়, গত সরকারের সময়ে মহাপরিকল্পনায় প্রায় ১,৪৯৮টি প্রাকৃতিক ও পর্যটন গন্তব্য চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিছু বাদ দিয়ে নতুন স্থান যুক্ত হতে পারে। যেমন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, আবার ধানমন্ডি ৩২-এর জাদুঘর বাদ পড়তে পারে। গোপালগঞ্জ এলাকার কিছু পরিকল্পনা কমানো হতে পারে।
নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, 'গন্তব্যগুলোকে পর্যটক–উপযোগী করতে যা যা দরকার, সে বিষয়ে আমরা পরামর্শ দেব। তবে স্বকীয়তা নষ্ট না করে পর্যটকবান্ধব করার দিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।'
বিটিবির তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইপিই গ্লোবাল ২০১৯ সালে মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব পায়। ২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একই বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, করোনা মহামারির কারণে সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নেয়া হয়। অবশেষে ২০২৩ সালের জুনে খসড়া কাজ শেষ হয়। তবে জাতীয় পর্যটন কাউন্সিলের অনুমোদন না থাকায় তা কার্যকর হয়নি।
পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা
মাস্টারপ্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৫.৫৭ মিলিয়ন বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিবছর পাঁচ থেকে ছয় লাখ বিদেশি পাসপোর্টধারী বাংলাদেশে আসেন।
এছাড়া পরিকল্পনায় ২১.৯৪ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য রয়েছে। বর্তমানে খাতে পাঁচ মিলিয়নের বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে।
এ পরিকল্পনায় ১০টি পর্যটন ক্লাস্টার তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতে ১.০৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ১০৫.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে, আর বেসরকারি খাত তারকা হোটেল, রিসোর্ট, বিনোদন পার্ক ও বিলাসবহুল সুবিধা নির্মাণ করবে।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন বোর্ডের পরিচালক মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, 'মাস্টারপ্ল্যান থাকলে উন্নয়নের জন্য গাইডলাইন পাওয়া যায়। বেসরকারি খাত অনেক দিন ধরে এটির অপেক্ষায় আছে।'
তিনি আরও বলেন, মাস্টারপ্ল্যান না থাকায় আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগগুলোর সমন্বয় হচ্ছে না। যেমন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা করছে, বেজা ট্যুরিজম পার্ক করছে, বিডার সঙ্গেও সমন্বয় প্রয়োজন। এজন্য একটি সামগ্রিক উন্নয়ন দরকার।