সাবেক মন্ত্রী সাইফুজ্জামানের ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার, আরও ৫ দেশে ‘অবৈধ সম্পদের’ খোঁজ পেল দুদক

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অবৈধ সম্পদের তথ্য-সম্বলিত ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই ও সিঙ্গাপুরে থাকা ৫৮২টি সম্পদের বাইরেও ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও কম্বোডিয়ায় তার বিপুল অবৈধ সম্পত্তি রয়েছে বলে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী এলাকার একটি বাড়ি থেকে সাইফুজ্জামানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট এসব নথি উদ্ধার করা হয়।
আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত ৪টা ১৫ মিনিটে কর্ণফুলী থানাধীন শিকলবাহা ইউনিয়নের একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। সাইফুজ্জামানের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানকারী টাস্কফোর্সের প্রধান, দুদকের উপ-পরিচালক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল সেখান থেকে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের ২৩ বস্তা নথি উদ্ধার করে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, পুলিশ ও অন্যান্য সাক্ষীর উপস্থিতিতে এসব নথি জব্দ করা হয়।
যদিও উপ-পরিচালক মশিউর রহমান ২২ বস্তা আলামত উদ্ধার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, সাইফুজ্জামানের স্ত্রী রুকমীলা জামানের গাড়িচালক ইলিয়াসের বাড়িতে কাগজপত্রগুলো লুকানো ছিল। অভিযানের আঁচ পেয়ে সেগুলো পাশের একটি দোকানে সরিয়ে ফেলা হয়। আমরা সেই দোকান থেকেই ২২ বস্তা নথি উদ্ধার করেছি। এগুলো তদন্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।'
দুদক জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত নথিতে বিদেশে নতুন সম্পদ অর্জন, বাড়ির মালিকানা, ভাড়া থেকে আয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। এছাড়া, এসব নথিতে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিদেশে মুদ্রা পাচার অর্থাৎ মানিলন্ডারিংয়ের সুস্পষ্ট আলামত পাওয়া গেছে।
অভিযানের আগে নথি সরানোর চেষ্টা
দুদক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, অভিযানের আগেই এসব নথি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কালুরঘাটে অবস্থিত আরামিট গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে বস্তাগুলো সরিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান ইউসিবিএলের চেয়ারম্যান রুকমীলা জামানের ড্রাইভার মো. ইলিয়াস তালুকদার। পরে ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকের অভিযানের আগে তিনি সেগুলো পাশের ওসমান তালুকদারের বাড়িতে সরিয়ে রাখেন, যেখান থেকে দুদক সেগুলো উদ্ধার করে।
দুদকের অনুসন্ধান টাস্কফোর্স জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ এই নথি পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করা হবে। এরপর সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণসহ একটি প্রতিবেদন কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।
রিমান্ডে দুই সহযোগী
এর আগে গত বুধবার সাইফুজ্জামানের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী মো. আব্দুল আজিজ (৩৯) ও উৎপল পালকে (৫১) নগরীর ডবলমুরিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দুদকের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উৎপল পাল সাবেক মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে তার বিদেশি সম্পত্তি দেখভাল করতেন এবং বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে অর্থ পাচারে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতেন। অন্যদিকে, আরামিট পিএলসির আরেক সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে সাইফুজ্জামানের নামে কেনা সম্পত্তি নিজের তত্ত্বাবধানে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
তাদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়েছে, যেগুলোতে অর্থপাচার নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একই মন্ত্রণালয়ের পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ার অভিযোগ ওঠে।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ঠিক আগমুহূর্তে তিনি স্ত্রী-পরিবারকে নিয়ে লন্ডনে পাড়ি জমান।