ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে তা ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার’ জন্য হুমকি হতে পারে: সালাহউদ্দিন

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে তা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
তিনি বলেন, 'যদি ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন স্থগিত কিংবা অনিশ্চিত করে এমন কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হয়, তা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে সুযোগ করে দেবে। অনেকে বলছে ফ্যাসিবাদী শক্তি সুযোগ পায় এমন কোনো কর্মকাণ্ড আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করবে। আমি বলছি, এটা রিজিওনাল সিকিউরিটির জন্য থ্রেট হতে পারে। এখানে দুইটা রিজিওনাল শক্তি, আমরা বাংলাদেশকে সেখানে নিতে চাই না।'
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন একে অপরের ওপর নির্ভরশীল নয়। সংস্কার সংস্কারের মতো চলবে, এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া; বিচারেও টাইম লিমিট করা যায় না, তাতে অবিচার হবে। কিন্তু নির্বাচনকে কোনোভাবেই শর্ত সাপেক্ষ করা যাবে না — নির্ধারিত টাইমলাইনে নির্বাচন হতেই হবে।'
তিনি বলেন, কমিশন কাজের সময় সীমা নিয়ে তাড়াহুড়া করছে না; যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে, তবে প্রক্রিয়াগত কিছু সময় লাগতে পারে। 'দুই-তিন দিনের মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে' — এমন অনিশ্চিততা রাখতে না চাই।
সালাহউদ্দিন জানান, কমিশনে মোট ৮২৬টি ছোট-বড় সংস্কার প্রস্তাব পাওয়া গেছে; তাতে মাত্র কিছু প্রস্তাবে দ্বিমত হয়েছে এবং বেশিরভাগ প্রস্তাবে লিখিত মতামতসহ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। মৌলিক ইস্যুতে ১৯টি সাংবিধানিক বিষয়ে আলোচনা বাকি আছে, তবে চূড়ান্ত ঐকমত্য প্রায় গৃহীত।
সংবিধানের ধারাগুলোর প্রাসঙ্গিকতায় তিনি বলেন, '৭০ অনুচ্ছেদের চারটি বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনতা না থাকলে ভালো হবে। সর্বনিম্ন দুইটি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছি।' নোট অব ডিসেন্টের ভাষা সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তা অনুসারে স্বাক্ষর করা হবে—যারা ক্ষমতা পাবে তারা তাদের নোট অব ডিসেন্ট রক্ষা করে বাস্তবায়ন করবে।
কিছু নির্দিষ্ট বিষয় ছাড়া অধিকাংশ অনুষঙ্গ সাধারণ এবং বাস্তবায়ন সহজ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাংবিধানিক বিষয়গুলো কি পরবর্তী সংসদ ছাড়া অন্য কোনো ফোরামে নেয়া যাবে—এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনি পরামর্শ দিতে পারে। প্রয়োজন হলে কমিশন সেখানে যাবে এবং সহায়তা নেবে।
চূড়ান্ত জুলাই সনদে কিছু ক্লারিক্যাল মিসটেক ও বিভ্রান্তিকর অংশ আছে; তা সংশোধন করা হবে, তিনি জানান। পাশাপাশি বলেন, এই সনদ হবে একটি জাতীয়-রাজনৈতিক ঐতিহাসিক দলিল—সেজন্য তা নিখুঁত হওয়া জরুরি এবং অপ্রসিদ্ধ বা আলোচিত হয়নি এমন বিষয় এতে রাখা ঠিক হবে না। বিতর্ক যত কম হবে তত ভাল।
কয়েকটি দলের 'আইনি ভিত্তি না থাকলে সনদে স্বাক্ষর না করার' অবস্থানের বিষয়ে তিনি জানান, কমিশন বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করেছে এবং ড্রাফটে লিখিত মতামত প্রদান করা হয়েছে। এতে এমন কোন বিষয় রাখা হবে না যা পরে টিকে উঠবে না। প্রয়োজনে আপিল বিভাগের মতামতও নেওয়া হবে; অতিরিক্ত কোনো সংবিধানিক উপায় খোঁজা যেতে পারে যাতে ভবিষ্যতে বিচার বিভাগে চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমরা বলতে পারি আমরা মতামত নিয়েছিলাম।
শেষে সালাহউদ্দিন বলেন, 'গত ১৫ বছরে আওয়ামী আমলে বিএনপি বেশি অনাচারের শিকার হয়েছে; বিচার চলবে—এটা আমাদের কমিটমেন্ট। কিন্তু নির্বাচনকে কন্ডিশনাল করা যাবে না।'