আধুনিকায়ন ও আয় বাড়াতে ঠান্ডাছড়ি পার্ক বেসরকারি খাতে ইজারা দেবে চসিক

চট্টগ্রাম নগরীর ফতেয়াবাদ এলাকায় অবস্থিত ঠান্ডাছড়ি রিসোর্ট পার্ককে আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পার্কটি বেসরকারি খাতে ২০ বছরের জন্য ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর মাধ্যমে পার্কটি আধুনিক বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হবে এবং চসিকের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
বর্তমানে পার্কটি চসিকের রাজস্ব বিভাগ পরিচালনা করছে। গত ১৩ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি লিজের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। শর্ত অনুযায়ী লিজ নিতে হলে ৩ কোটি টাকার পে-অর্ডার জামানত, প্রস্তাবিত নকশা, বিনিয়োগ পরিকল্পনা ও পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। তবে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত কোনো আবেদন জমা পড়েনি। এ কারণে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।
চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরোয়ার কামাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ঠান্ডাছড়ি পার্ক আধুনিকায়নের জন্য আমরা এমন প্রতিষ্ঠান খুঁজছি যাদের বড় প্রকল্প পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও সুনাম আছে। এতে বিনিয়োগ সঠিকভাবে কাজে লাগবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করলে একদিকে চট্টগ্রামে একটি আধুনিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে উঠবে, অন্যদিকে চসিক একটি স্থায়ী ও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা আয়ের উৎস পাবে। বর্তমানে কয়েকজন কেয়ারটেকার পার্কটির দেখভাল করেন। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পিকনিক আয়োজনের জন্য অনুমতি নেয়।'
২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে ঠান্ডাছড়ি পার্ক উদ্বোধন করা হয়। পার্কটির আয়তন প্রায় ৩২ একর, এর মধ্যে ৯ দশমিক ৫ একর উন্নয়ন করা হয়েছে। চারপাশের পাহাড়, পুকুর ও কৃত্রিম হ্রদ মিলিয়ে পার্কে তৈরি হয়েছে শান্ত ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখানে রয়েছে সবুজ গাছগাছালি, ফলের বাগান ও নানা প্রজাতির পাখির কলরব।
একসময় নৌকাভ্রমণের জন্য পরিচিত এ পার্কে বর্তমানে মাছ ধরতে কিংবা পিকনিক আয়োজন করতে ৫ হাজার টাকা ফি দিতে হয়। তবে সাধারণ প্রবেশ এখনো বিনামূল্যে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, বেসরকারি খাতে গেলে এন্ট্রি ফি চালু হতে পারে, যা সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকারে সীমাবদ্ধতা তৈরি করবে।
এর আগেও ২০১৯ সালে তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন পার্কটি বেসরকারি খাতে লিজ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে সমালোচনার কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি।
এদিকে নগরের আরও চারটি পার্কে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত হয়ে পড়েছে। কিছু পার্ক বন্ধ হয়ে গেছে, কিছু আবার বাণিজ্যিকীকরণের আওতায় এসেছে।
আগ্রাবাদ এলাকার কর্ণফুলী শিশুপার্ক ১৯৯৯ সালে আনন্দ মেলা লিমিটেড গড়ে তোলে। এর ২৫ বছরের ইজারা ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর সরকারি নির্দেশে পার্কটি বন্ধ রাখা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রধান ফটকে তালা, ভেতরে আগাছায় ঢাকা জায়গা ও ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা আসবাবপত্র। নিরাপত্তাকর্মীরা জানিয়েছেন, ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানই পার্কটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
স্বাধীনতা কমপ্লেক্স পার্ক, যা আগে শহীদ জিয়া কমপ্লেক্স নামে পরিচিত ছিল, ২০০৬ সালে ১১ একর জায়গায় পুনর্গঠিত হয়। সেখানে ছিল ঐতিহাসিক স্থাপনার রেপ্লিকা, নানা রাইড ও রেস্তোরাঁ। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫–৬ আগস্ট পার্কে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সাল থেকে ইজারা পাওয়া হেলাল উদ্দিন সরকার আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর পার্কটি বন্ধ হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম শিশুপার্কটি ১৯৯২ সালে কাজির দেউড়িতে তিন একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়। প্রথমে এটি ২৫ বছরের জন্য মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডকে লিজ দেওয়া হয়। ২০২০ সালে একই প্রতিষ্ঠান আবারও ১৫ বছরের জন্য লিজ নেয়। তবে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ ওঠায় এটি ভেঙে দেওয়ার দাবি ওঠে। অবশেষে ২০২৩ সালে চুক্তির শর্ত ভঙ্গের দায়ে জেলা প্রশাসনের অভিযানে পার্কটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
১৯৭৯ সালে নগরের ২ নম্বর গেটে গড়ে ওঠা বিপ্লব উদ্যানের একটি অংশ বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে রয়েছে ২১টি খাবারের দোকান ও দুটি শৌচাগার। এছাড়া চসিক মেয়র প্রাইভেট ফার্ম নূর হাফিজ প্রপার্টিজের সঙ্গে ২৫ বছরের সৌন্দর্যবর্ধন চুক্তি করেছেন।
নগর পরিকল্পনাবিদ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে জানিয়েছে, এসব পার্কে নতুন কংক্রিট স্থাপনা গড়ে উঠলে নগরের উন্মুক্ত সবুজ স্থান আরও কমে যাবে।