বিদিশার গাড়ি চুরির মামলার আসামিকে নির্যাতন: কারাগারে সাবেক ওসি আমিনুল

সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের গাড়ির চুরির মামলার আসামি মোরশেদ মঞ্জুরকে হেফাজতে নির্যাতনের মামলায় টাঙ্গাইলের পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আসামি আমিনুল ইসলাম ঢাকার গুলশান থানায় সাবেক ওসি (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার আদালত এই আদেশ দেন।
গতকাল ১০ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার থেকে আমিনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপরে তাকে মির্জাপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়। মির্জাপুর থানার এসআই রমিজ রায়হান তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
আমিনুল ইসলামের পক্ষে আমিনুল গণি টিটো জামিন চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, গুলশান থানার এসআই হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন মোরশেদ মঞ্জুর। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনকে আসামি করা হয়। পিবিআই -এর প্রতিবেদনে তার (আমিনুল ইসলাম) নাম আসে। অভিযোগ, ভিকটিমকে তার রুমে নিয়ে আসা হয়। রুমে এনে মারধর করা হয়, এমন অভিযোগ কিন্তু নাই। পরবর্তীতে (ভিকটিমকে) ওসি মাজহারুল ইসলামের রুমেও নেয়া হয়। থানার এসি, ওসির বিরুদ্ধে প্রতিবেদনে একটা শব্দও নেই। অভিযোগ সব আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। যেকোনো শর্তে তার জামিনের প্রার্থনা করছি।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আজিজুল হক দিদার জামিনের বিরোধীতা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, এ আসামি জামিন পেলে মামলায় ব্যাঘাত ঘটাতে পারেন। পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দুই পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত আমিনুল ইসলামের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত বছরের ২৭ জুন মোরশেদ মঞ্জুর নামে ওই ব্যক্তি ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে গুলশান থানার এসআই হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। মামলায় ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনের ৪/৫/৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ১০ মে আমিনুল ইসলাম এবং হাফিজুর রহমানকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন পিবিআই'র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবির হোসেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, মোরশেদ মঞ্জুর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। পূর্ব পরিচিত বিদিশা সিদ্দিকের কাছ থেকে তিনি একটি জাগুয়ার প্রাইভেট কার ৩৯ লাখ টাকায় ক্রয় করেন। গাড়ির টাকাসহ নাম পরিবর্তন বাবদ আরও এক লাখ ৯৫ হাজার পরিশোধ করেন। কিন্তু বিদিশা সিদ্দিক মিথ্যা তথ্য দিয়ে গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে একটি মামলা করেন।
গত বছরের ২০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তাকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানায় নিয়ে আসে। সেখানে গাড়ি উদ্ধারের নামে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান মোরশেদকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে মানসিকভাবে নির্যাতনসহ কিল, ঘুষি এবং লাঠি দিয়ে মারধর করেন। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং ক্রসফায়ারে হত্যা করার হুমকি দেন।
একপর্যায়ে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের কারণে দৈনন্দিন মোরশেদ স্বাভাবিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।