ছাত্র সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার ব্যয়বহুল: চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার

৩৬ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন আগামী ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এবার সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৮টি কেন্দ্রীয় পদে ভোট গ্রহণ হবে।
এদিকে, চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহারের খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, "গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে স্টিলের ব্যালট বাক্স ব্যবহার হয়েছে। আমরাও প্রাথমিকভাবে সেটাই ভেবেছিলাম। তবে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের বিষয়টি সামনে আসায় আলোচনা করেছি। নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকা স্বচ্ছ বাক্সগুলোর আকার ছোট।"
তিনি জানান, "ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যালট পেপার ১৫–২০ পৃষ্ঠার হবে। ফলে স্বচ্ছ বাক্স ব্যবহার করতে হলে নতুন করে বানাতে হবে। এতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। আমাদের বাজেটের সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তারপরও আমরা বিষয়টি বিবেচনা করব।"
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মুঠোফোনে এমন মতামত জানান তিনি। এর একদিন আগে অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে তিনি ও কমিশনের আরও দুজন সদস্য পর্যবেক্ষক ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা চাকসু নির্বাচনে কীভাবে কাজে লাগানো হবে—এ প্রশ্নে তিনি বিস্তারিত জানান।
তফসিল অনুযায়ী, ১ সেপ্টেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ২৫ হাজার ৮৬০ জন ভোটার তালিকাভুক্ত। আজ, ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা। মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে ১৪ সেপ্টেম্বর এবং জমা দেওয়ার শেষ সময় ১৭ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টা। যাচাই-বাছাই হবে ১৮ সেপ্টেম্বর। ২১ সেপ্টেম্বর প্রকাশ হবে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টা এবং প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গে অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, "ডাকসুতে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে বাউন্ডারিকে গুরুত্ব দেওয়ায় কেন্দ্রগুলো ঘন হয়ে গিয়েছিল। এতে ভোটাররা ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। আমরা বড় বড় অনুষদগুলোকে ভোটকেন্দ্র করার পরিকল্পনা করছি। বুথে ভোটাররা মোবাইল, ডিভাইস ও ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। এজন্য আলাদা জমা রাখার ব্যবস্থা থাকবে। ডাকসুতে একজন ভোটারের ভোট দিতে গড়ে ১২ মিনিট লেগেছে। চাকসুতে বেশি বুথ স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।"
চাকসু নির্বাচনে ব্যালট পেপারভিত্তিক বাক্স ব্যবহারের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, "ডাকসু নির্বাচনে একই ব্যালট বাক্সে সব পেপার ফেলার কারণে পরে আলাদা করতে সময় লেগেছে। চাকসুতে ওএমআর স্ক্যানের মাধ্যমে গণনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ খাতে ন্যূনতম ২৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।"
চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত দুর্গাপূজার ছুটিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকবে। প্রচারণায় ভাটা পড়বে কিনা—এ প্রশ্নে মনির উদ্দিন বলেন, "ছুটি শেষে প্রার্থীরা আরও এক সপ্তাহ প্রচারণার সুযোগ পাবেন। এ সময় হলে ও অনলাইনে প্রচারণা চালানো যাবে। এতে কোনো প্রভাব পড়বে না।"
চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ১২ সদস্যের মধ্যে বিএনপি, জামায়াতপন্থী শিক্ষকরাও আছেন। জামায়তপন্থী শিক্ষকদের বিষয়ে ছাত্রদল এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের বিষয়ে ছাত্রশিবির আপত্তি তুলেছে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এ প্রসঙ্গে মনির উদ্দিন বলেন, "আমি কখনও কোনো রাজনৈতিক দল করিনি। প্রশাসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সমর্থিত শিক্ষক আছেন। তবে সিন্ডিকেটের অনুমোদনে কমিটি গঠন হয়েছে। ডিন, প্রভোস্টসহ দায়িত্বপ্রাপ্তরা অন্তর্ভুক্ত আছেন। নির্বাচন স্বচ্ছভাবে হবে, তাই শিক্ষকদের প্রভাবিত করার সুযোগ নেই।"
প্রার্থীদের জন্য ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক থাকবে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে আলাদা স্লিপ দেওয়া হবে। নির্ধারিত চিকিৎসাকেন্দ্রে পরীক্ষা করে রিপোর্ট কমিশনে পাঠাতে হবে। ডোপ টেস্টে পজিটিভ হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথ কম। নির্বাচনের দিন বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর ব্যালট পেপারসহ অন্যান্য প্রস্তুতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।"
উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়বার ভোট হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।