আসনসীমা নিয়ে আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই: ইসি আনোয়ারুল

জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আর আদালতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।
গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-এর ৭ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, 'এই আইনের অধীনকৃত সীমানা নির্ধারণ, কোনো আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার গঠন কিংবা কমিশনের গৃহীত কার্যধারা বা কাজের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।'
তিনি আরও বলেন, "আইনগতভাবে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।"
গত বৃহস্পতিবার ৩০০ আসনের চূড়ান্ত সীমানার তালিকা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে প্রায় ৫২টি আসনে পরিবর্তন আনা হয়। গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হলেও বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়েছে। নতুন এই সীমানায় অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
তবে আসনসীমা পরিবর্তন নিয়ে গাজীপুরে আনন্দ মিছিল হলেও বিভিন্ন এলাকায় চলছে বিক্ষোভ।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল বলেন, "কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজটি শেষ করেছে। আইনে প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক এলাকা ও সর্বশেষ আদমশুমারির কথা বলা আছে। সেই প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখা গেছে কিছু অসামঞ্জস্য ও বিতর্ক আছে। তাই গত ১৬ জুনের হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য যাচাই করে জেলায় ভোটার সংখ্যা, গড় ও মোট সংখ্যা বিবেচনায় এনে কোথাও বেশি, কোথাও কম—এসব ভারসাম্য ঠিক করে খসড়া তৈরি করা হয়।"
তিনি জানান, খসড়ার ওপর দাবি-আপত্তি আসলে শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। "আদমশুমারির ঘাটতি যাতে না থাকে, সেজন্য ভোটার সংখ্যাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ফলে ৪৬-৫০টি আসনে পরিবর্তন হতে পারে।"
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ''সীমানা নিয়ে কারা আন্দোলন করছে, কেন করছে বা কী বলতে চাইছে—তা এখনো আমরা জানি না। কারণ এক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা, রাজনৈতিক ও স্থানীয় বিষয় জড়িত থাকে। তবে কমিশন সর্বোচ্চ সতর্কতা, নিরপেক্ষতা এবং যৌক্তিক দাবি-আপত্তি বিবেচনায় এনে সীমানা নির্ধারণ করেছে। চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আদালতে অভিযোগ করার কোনো সুযোগ নেই।''
জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণে কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, শুধু প্রশাসনিক বিষয় নিলে এক ধরনের সমস্যা হয়, আবার ভৌগলিক এলাকা বাদ দিলে অন্য রকম সমস্যা দেখা দেয়। কাজেই সবকিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হলেও বাগেরহাটে একটি আসন কমানো হয়েছে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ভোটার সংখ্যার ভিত্তিতে গাজীপুরে সবচেয়ে বেশি আর বাগেরহাটে সবচেয়ে কম ছিল। গড় ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার। সেটি ধরলে বাগেরহাটে আসন কমই থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে ভোটার সংখ্যাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা বিব্রত নই। শতভাগ ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করেছি।"
কোথাও আনন্দ মিছিল আবার কোথাও বিক্ষোভ চলছে—এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আইনের ভাষায় কোনো লাভ আছে বলে মনে হয় না।"
তিনি মনে করিয়ে দেন, "এই আইনের অধীনকৃত সীমানা নির্ধারণ, কোনো আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকার গঠন কিংবা কমিশনের গৃহীত কার্যধারা বা কাজের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা যাবে না।"
শনিবার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, "আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সার্বিক পরিবেশ শতভাগ অনুকূলে। কোনো অনিশ্চয়তা নেই। নির্বাচন নিয়ে অনুকূল নয়—এমন কোনো তথ্য কমিশন পায়নি।"
দল নিবন্ধন প্রসঙ্গে তিনি জানান, "প্রায় সব রিপোর্ট কমিশন পেয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে নিবন্ধনের শেষ ধাপে দলের নাম নিয়ে আপত্তি তোলার সুযোগ থাকবে।"
সংবিধান ও বিদ্যমান আইন নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "প্রস্তাবিত আরপিও সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্য কোনো আইনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকলে সমন্বয়ের মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে।"