জবানবন্দিতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরের ফাঁসি চাইলেন শহীদ আনাসের মা

রাজধানীর চানখারপুলে গত বছরের ৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে সাবেক ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ গুলি চালিয়ে ছয়জনকে হত্যা করে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের মা সানজিদা খান দীপ্তি। ছেলে হত্যার বদলা হিসেবে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন তিনি।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে নবম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন দীপ্তি।
তিনি বলেন, 'গত বছরের ৫ আগস্ট চানখারপুলে হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী ও রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম। তাদের নির্দেশনায় নির্বিচারে গুলি চালান রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম। গুলিতে আমার ছেলে আনাসসহ ছয়জন শহীদ হন।'
তিনি আরও অভিযোগ করেন, 'এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আমি হত্যার বদলে হত্যা চাই। এসব আসামির ফাঁসির আদেশ চাই।'
জবানবন্দিতে সানজিদা খান দীপ্তি বলেন, ''২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকালে একটি চিঠি লিখে বাসা থেকে বের হয়েছিল আনাস। তাতে লিখেছিল- 'মা আমি মিছিলে যাচ্ছি। যদি না ফিরি তবে গর্বিত হইও।' দুপুরে তার মৃত্যুসংবাদ পান তিনি। পরে লাশ মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে আনতে গিয়ে দেখেন ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে।''
তিনি জানান, আনাসের লাশ রিকশায় করে বাসায় নেওয়ার পথে রক্তে ভেসে যান তিনি, তার স্বামী ও বাবা। লাশ বাড়িতে নেওয়ার পর হত্যার বিচার দাবি করে এলাকাবাসী মিছিল করেন। পরে ধুপখোলা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় আলেমের পরামর্শে রক্তাক্ত কাপড়েই শহীদের মর্যাদায় আনাসকে দাফন করা হয়।
আন্দোলনকারী রাব্বী ও সৌরভের বরাতে এই সাক্ষী আরও বলেন, 'ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজারও আন্দোলনকারীর সঙ্গে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলেন আনাস। চানখারপুলে পৌঁছালে পুলিশ-র্যাব গুলি চালায়। প্রাণ বাঁচাতে আন্দোলনকারীরা আশপাশের গলিতে আশ্রয় নেন। সেখানেই লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে আনাস বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। পরে সবাই তাকে রিকশায় হাসপাতালে নিয়ে যায়।'
এদিন আদালতে হাজির করা হয় চার আসামিকে- শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা পর্যায়ক্রমে সানজিদা খান দীপ্তিকে জেরা শুরু করেন। প্রথমে জেরা করেন আরশাদের আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি।