গাইবান্ধায় মন্দির নিয়ে বিরোধ, গভীর রাতে প্রতীমায় আগুন

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে কামারপাড়ায় একটি প্রতীমায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১ টার দিকে হামিন্দপুর কামারপাড়া সর্বজনীন দুর্গা মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে।
পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। অগ্নিকাণ্ডে কয়েকটি প্রতীমা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে হামিন্দপুর কামারপাড়া মন্দির নিয়ে বর্তমান কমিটির সদস্যদের সাথে সাবেক কমিটির সদস্যদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে দুই পক্ষই থেকে এই মন্দিরে দুর্গোৎসব করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
এর জেরে গত শনিবার দুপুরে বর্তমান কমিটির ক্যাশিয়ার কার্তিক চন্দ্র সরকার মন্দিরের প্রধান দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে মন্দির কমিটির সাবেক সদস্যদের কারিগররা মন্দিরের দক্ষিণ পাশে খোলা আকাশের নিচে দুর্গা পূজার প্রতীমা তৈরির কাজ শুরু করেন। গত ৫ থেকে ৬ দিনে তারা বাঁশ ও খড় দিয়ে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতীমাসহ নানা সরঞ্জাম তৈরি করেন। কিন্তু রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা হঠাৎ প্রতীমাগুলোতে আগুন দিলে মুহূর্তেই সব পুড়ে যায়।
মন্দির কমিটির সাবেক সভাপতি অনুকুল চন্দ্র রনু বলেন, 'মন্দির নিয়ে সামাজিক বিরোধের কারণে আমরা ৮ থেকে ১০ টি পরিবার মন্দিরের পাশে ছাপড়া ঘর তুলে পূজার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিই। সে অনুযায়ী প্রতীমা তৈরির কাজ চলছিল। কিন্তু শত্রুতার আগুনে সব পুড়ে গেছে। পরিকল্পিতভাবে প্রতীমায় আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কার্তিক চন্দ্রের সম্পৃক্ততা আছে।'
মন্দির কমিটির বর্তমান সভাপতি কুন্তূল চন্দ্র দাস বলেন, 'এই দ্বন্দ্বের কারণে আমাদের দুর্গা প্রতীমা মন্দির কমিটির ক্যাশিয়ার কার্তিক চন্দ্র সরকারের ঘরে তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু বিপক্ষ খোলা জায়গায় অরক্ষিতভাবে প্রতীমা তৈরির কাজ শুরু করেন। রাতের আঁধারে কে বা কারা এই আগুন দিয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।'
অভিযোগ অস্বীকার করে মন্দির কমিটির ক্যাশিয়ার কার্তিক চন্দ্র সরকার বলেন, 'তদন্ত করলেই বের হবে কে বা কারা আগুন লাগিয়েছে, সেটা বেরিয়ে আসবে।'
মন্দিরের পাশের বাসিন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দীপ্তি রানী জানান বলেন, 'প্রতীমা পুড়ে যাওয়ায় এবার দুর্গাপূজা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।'
এদিকে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান সাদুল্লাপুর থানার ওসি তাজউদ্দীন খন্দকার এবং সাদুল্লাপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত চন্দ্র অধিকারী। পরিদর্শন শেষে স্থানীয় পূজা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
ওসি তাজউদ্দীন খন্দকার বলেন, 'রাতের আধারে দুর্বৃত্তরা প্রতীমা আগুন দিয়েছে। গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এছাড়া বিরোধ সমাধানে উভয় পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে।'
সাদুল্লাপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রভাত চন্দ্র অধিকারী বলেন, 'এই মন্দির নিয়ে কার্তিক চন্দ্রের সঙ্গে বিরোধের বিষয়টি আমরা এর আগেও থানায় বসে সমাধান করেছি। কিন্তু আবারও দ্বন্দ্ব চলছিল। বিষয়টি সমাধানের জন্য বসার কথা ছিল। তার আগেই প্রতীমায় আগুন দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুতই দুপক্ষকে নিয়ে বসে সমাধানের চেষ্টা করব।'