মাইকে ঘোষণা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা, আহত অর্ধশতাধিক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তা ও মারধররের জেরে শনিবার (৩০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
আহতদের মধ্যে গুরুতর অন্তত ২০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করেছে প্রশাসন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রাত সাড়ে ১১টায় ভাড়া বাসায় ফিরতে দেরি হওয়ায় এক নারী শিক্ষার্থীকে ওই বাড়ির দারোয়ান হেনস্তা ও মারধর করেন। খবর পেয়ে সহপাঠীরা গিয়ে দারোয়ানকে ধরার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা মাইকিং করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
বাচামিয়ার দোকানসংলগ্ন এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর চারদিক থেকে হামলা হয়, পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো ২নং গেট এলাকা থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক পর্যন্ত।
হামলাকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িবহর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন প্লাটুন সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
হামলায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল মাশনূন টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের এক জুনিয়র বাসায় ফিরতে একটু লেট করায় তার বাসার দারোয়ান তাকে বকাঝকা করে গায়ে হাত তোলে। ঘটনা শোনার পর আমরা কয়েকজন সেখানে যাই। যাওয়ার পরে দেখি দারোয়ান পালিয়ে যাচ্ছে। পরে তাকে ধরে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে এক সিএনজিওয়ালা বলেন, এটার বিচার স্থানীয় মেম্বার করবেন। এই কথা বলতে বলতে আমাদের একজনের ওপর হামলা করল। এরপরে আমি হলে এসে লোকজন বের করছিলাম। প্রক্টরকে ফোন দিচ্ছিলাম, প্রক্টররা ফোন ধরেনি।'

চবি মেডিকেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, 'আহতদের সংখ্যাটা ৫০-এর বেশি হবে। এদের মধ্যে প্রথমে তিন ধাপে মোট ১২ জনকে গুরুতর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠায়েছি। পরে আরও কয়েকজনকে পাঠানো হয়। কারও মাথায় আঘাত, কারো হাতে বা পায়ে ফ্র্যাকচার, লাঠি দিয়ে পেটানোর চিহ্ন, কারো মাথায় পাথরের আঘত, কারো শরীরে কোপের দাগ দৃশ্যমান। এছাড়াও বহু শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। আমরা তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছি।'
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, 'আমরা রাত ১২টাতেই আমাদের একাধিক নিরাপত্তা টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় তাদেরকে এক জায়গায় এনে দিকনির্দেশনা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। সময়মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতিও ছিল না। পরবর্তীতে সেনাবাহিনির সহযোগিতা চাওয়া হয়। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।'
এদিকে আহতদের মধ্যে অনেকের পরীক্ষা থাকায় আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন।