৬ মাসে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব পেয়েছে বিডা-বেপজা

২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত, ৬ মাসে বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটি (বেজা), বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনস অথরিটি (বেপজা) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটিতে এ বিনিয়োগ প্রস্তাব জমা পড়েছে।
বিডার ব্যবসা উন্নয়ন প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, এরমধ্যে বেপজা পেয়েছে ৩২০ মিলিয়ন ডলার, বিডা ৬৩০ মিলিয়ন ডলার এবং বাকিটা—প্রায় ৭০ মিলিয়ন ডলার—পেয়েছে হাইটেক পার্ক ও বেজা।
তিনি বলেন, "এসব কেবল বিনিয়োগ প্রস্তাব, এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিটি প্রস্তাব নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগোবে এবং সময়ের সঙ্গে একটি অংশ বাস্তব বিনিয়োগে রূপ নেবে; সাধারণত ১ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।"
রচি আরও বলেন, "এটি বড় আকারের বিনিয়োগের একটি বৈশ্বিক ধারা। সাধারণত প্রস্তাবগুলো অনুসন্ধান পর্যায়ে শুরু হয় এবং যথাযথ সহায়তার মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের দিকে এগোয়।"
তিনি স্পষ্ট করে জানান, প্রাপ্ত প্রস্তাবের অর্ধেক বিদেশি প্রতিষ্ঠানের, বাকিগুলো স্থানীয় কোম্পানির।
বিডা সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবগুলোর প্রায় ২০ শতাংশ ইতোমধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে—যার মধ্যে রয়েছে চুক্তি স্বাক্ষর, জমি ইজারা নিশ্চিতকরণ ও বরাদ্দপত্র প্রদান। প্রায় ৬০ শতাংশ প্রস্তাব এখনো প্রাথমিক যাচাই বা সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ পর্যায়ে রয়েছে—যেখানে ফিজিবিলিটি স্টাডি, প্রাথমিক আলোচনা ও প্রকল্প পরিকল্পনা চলছে।
বেপজা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত সময়ে তারা ১৭টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৮৪.৪৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ ও স্বচ্ছতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেজার পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী সদস্য মো. নাজরুল ইসলাম জানান, তারা একটি 'ইউনিফায়েড ইনভেস্টমেন্ট পোর্টাল' তৈরি করছেন। এ প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগের অবস্থা, নির্দিষ্ট জোনভিত্তিক উন্নয়ন, জমির প্রাপ্যতা এবং অনুমোদনের সময়সীমা—সব তথ্য এক জায়গায় পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, "বর্তমানে তথ্য হালনাগাদ অনেক সময় বিভিন্ন সংস্থায় খণ্ডিতভাবে হয়ে থাকে। নতুন প্ল্যাটফর্মটি তথ্য বিনিময়কে মানসম্মত করবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সমন্বয় আনবে।"
বিডা জানিয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধীরে ধীরে ফিরছে, যা সরকার পরিচালিত সংস্কার কার্যক্রম, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাড়তি যোগাযোগ এবং একাধিক বড় প্রকল্প ঘোষণার কারণে সম্ভব হয়েছে।
বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আসল বিনিয়োগ হলো আউটপুট, ইনপুট নয়। আমাদের কাজ হলো বিনিয়োগের পরিবেশ যতটা সম্ভব উন্নত করা। যারা বিনিয়োগ খুঁজছেন তাদের সচেতন করা এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব।"
"তবে বিনিয়োগ অনেক বাহ্যিক বিষয়ের ওপরও নির্ভর করে। রিজার্ভ অবস্থা থেকে শুরু করে বাজার স্থিতিশীলতা—এসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেহেতু এসব ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছে, তাই গত ১০-১২ মাসে অর্থনীতির ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা গেছে," যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে নিট এফডিআই (বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ) দাঁড়িয়েছে ৮৬৪.৬৩ মিলিয়ন ডলার—যা গত বছরের একই সময়ের ৪০৩.৪৪ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় ১১৪.৩১ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বরের ৪৯০.৪০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায়ও এটি ৭৬.৩১ শতাংশ বেশি। এ সময়ে ইক্যুইটি বিনিয়োগও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৪.৩৮ মিলিয়ন ডলারে—যা গত বছর ছিল ১৮৮.৪৩ মিলিয়ন ডলার।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, "এত বড় পরিবর্তনের পরও মোট বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেনি। শুরুতে তিন মাস কিছুটা কমলেও এখন আবারও বাড়ছে।"
তিনি মনে করেন, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে নেওয়া উদ্যোগ—যেমন এফডিআই হিটম্যাপ, রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট টিম—আগামী বছর থেকে বিনিয়োগে উল্লেখযোগ্য উন্নতি আনবে।
বেপজা সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত সময়ে সংস্থাটি যে ১৭ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জমি ইজারা চুক্তি করেছে, এরমধ্যে বাংলাদেশের ইপিএল (এক্সপোর্ট লিংক) অ্যাকসেসরিজ লিমিটেড বেপজা ইকোনমিক জোনে ৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে; তাদের উৎপাদনের তালিকায় রয়েছে—ফোম, কার্টন, পলি, গাম টেপ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য।
সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভারতে কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রাইম লিফ প্রসেসিং কোম্পানি লিমিটেড বিনিয়োগ করবে ৮.৮৪ মিলিয়ন ডলার; প্রতিষ্ঠানটি বেপজা অঞ্চলে তামাক প্রক্রিয়াজাত করবে।
একইভাবে সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের লিজ টোব্যাকো মেশিনারি কোম্পানি লিমিটেড ৮.৩২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে তামাক ও সিগারেট তৈরির যন্ত্রপাতি উৎপাদনে।
চীনভিত্তিক বাংলাদেশ হাইজিনটোন হেয়ার প্রোডাক্টস কো লিমিটেড ঈশ্বরদী ইপিজেড-এ ৩.৮১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে উইগ ও চুল-সম্পর্কিত পণ্যে।
বাংলাদেশের হামজা ফাইবার্স লিমিটেড কর্ণফুলী ইপিজেড-এ ১৬ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে, যা এই তালিকায় সর্বোচ্চ। প্রতিষ্ঠানটি গার্মেন্টস পণ্য উৎপাদন করবে।
সিঙ্গাপুর ও ভারতের অ্যালাইড টোব্যাকো কোম্পানি লিমিটেড বেপজা ইজেড-এ ৯.২৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে সিগারেট স্টিক উৎপাদনে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশের কেকেওয়াই ক্যানভাস লিমিটেড আদমজি ইপিজেড-এ ১৭.৫১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে পোশাক ও পোশাক-সংশ্লিষ্ট পণ্য উৎপাদনে।