জুলাই আন্দোলনকারীদের গুলি করা হয় উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে: ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেন, 'জুলাই আন্দোলনে আহত/নিহতদের কোনো উঁচু জায়গা বা হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হয়েছে। কোনো কোনো আহতের মাথায় গুলি লেগে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়।'
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) সাক্ষীর ডায়াসে দাঁড়িয়ে এসব কথা বলেন ডা. মোস্তাক আহমেদ।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ২৭ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন এই চিকিৎসক। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বর্তমানে তিনি ঢামেক হাসপাতালে ক্যাজুয়ালটি বিভাগের আবাসিক সার্জন হিসেবে কর্মরত।
এসময় তিনি বলেন, 'ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চাকরির সুবাদে আগেও অনেক গুলিবিদ্ধের সেবা দিয়েছি। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতদের ধরন ছিল কিছুটা ভিন্ন। তাদের গুলির ডিরেকশন ছিল ওপর থেকে নিচের দিকে। সাধারণত ডিরেকশন থাকে নিচ থেকে ওপরে বা সমান্তরাল।'
গুলিবিদ্ধদের চিকিৎসায় তৎকালীন সরকার-সমর্থিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎসকরা বাধা দেন বলে জানান এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, 'গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দিতে আমাদের অতিউৎসাহী হতে বারণ করেন আওয়ামী লীগ সরকার সমর্থিত স্বাচিপের কতিপয় চিকিৎসক। তারা বলেন যে এরা সন্ত্রাসী। এদের চিকিৎসা দেওয়া যাবে না।
সাক্ষী বলেন, 'এমনকি গুলিবিদ্ধ ছাত্রদের চিকিৎসা দেওয়ায় গত বছরের ২৫ জুলাই আমাদের পাঁচজন চিকিৎসককে অন্যত্র বদলি করা হয়। আহতদের চিকিৎসায় বাধার উদ্দেশ্যেই তাদের বদলি করা হয়েছে।'
জবানবন্দিতে ডা. মোস্তাক বলেন, '২০২৪ সালের ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই এবং ৪ ও ৫ আগস্ট সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গুলিবিদ্ধকে চিকিৎসা দিই আমরা।'
তিনি আরও বলেন, 'আন্দোলন চলাকালে একদিন একটি পরিবারের বাবা-ছেলে দুজন গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা মারা যান। এতে ছেলে আক্ষেপ করে বলেন- 'বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না।'
এমন ঘটনার সাক্ষী তিনি নিজেই হয়েছেন বলে জবানবন্দিতে তুলে ধরেন।
এই চিকিৎসক বলেন, 'আহতদের বেশিরভাগের বয়স ছিল ২০-৩০ বছরের মধ্যে। আন্দোলন চলাকালে ঢাকা মেডিকেলের শহীদুল্লাহ হল সংলগ্ন গেট দিয়ে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে পরিচয় জানতে চাইতেন ছাত্রলীগের ছেলেরা। ছাত্র পরিচয় পেলে ঢুকতে বাধা দিতেন তারা।'
তিনি বলেন, 'এছাড়া চিকিৎসা চলাকালে ছাত্রলীগের সশস্ত্র কর্মীরা হাসপাতালে ঢুকে খোঁজখবর নিতেন আহত কারা। তখন গুলিবিদ্ধ ছাত্ররা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখার জন্য আমাদের অনুরোধ করেন।'
এ সময় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নৃশংসতার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দায়ী করেন ঢামেক হাসপাতালের এই চিকিৎসক।
একইসঙ্গে সেই সময়ে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিতদের বিচার ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।
ট্রাইব্যুনালে আজ সাক্ষ্য দিয়েছেন আরও দুজন।
তাদের একজন মিটফোর্ড হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান এবং আরেকজন ঢামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মনিরুল ইসলাম।
নবম দিনের মতো মোট ২৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।