চাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ আগামী সপ্তাহে, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন

ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হতে যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে (সোমবারের পর) এই রোডম্যাপ ঘোষণা হতে পারে। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ১১ সেপ্টেম্বর এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ও তফসিল ঘোষণা হয়েছে। জমেও উঠছে নির্বাচনের আমেজ। এমন পরিস্থিতিতে চাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।
চবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চাকসুর গঠনতন্ত্র অনুমোদনের পর, নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে তাদের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। আর সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার অভিপ্রায় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫৯তম সিন্ডিকেট সভায় নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকীকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। চবির ৫৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে নিয়মিত ছাত্রদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। আগামী সোমবার কমিটি নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।
চাকসু নির্বাচন পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল হক সিদ্দিকী টিবিএসকে বলেন, "৫৪টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউট থেকে শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে, কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। তাই পুনরায় তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকাগুলো আসছে। এই কয়েক দিনের মধ্যে কমিটি বসে সবকিছু চূড়ান্ত করবে। নির্বাচনের আচরণবিধির খসড়া করা হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করা হবে। খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ চলছে। আাগমী সোমবারের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে একটি ঘোষণা দিতে পারব বলে আশা করছি।"
২৮ পদে নির্বাচন
নতুন গঠনতন্ত্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনা ও দেশের ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার যুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার, চাহিদা ও সমস্যাগুলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের সামনে উপস্থাপন এবং তা সমাধানের লক্ষ্যে এই কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়েছে।
চাকসুর পদগুলোর যুগোপযোগী করা হয়েছে। চাকসু কার্যনির্বাহী কমিটিতে মোট ২৮টি পদ রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ জন নির্বাহী সদস্য পদ। পূর্ববর্তী গঠনতন্ত্রে পদসংখ্যা ছিল ২৮টি পদের মধ্যে নির্বাহী সদস্য ছিলেন ১০ জন। একইসঙ্গে চাকসুর সদস্য ও প্রার্থীদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ বছর।
নতুন গঠনতন্ত্রে সময়োপযোগী নতুন ১২টি পদ যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হল— গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক; বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক; স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক; যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক; দপ্তর সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক (পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত); ছাত্রী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও সহকারী সম্পাদক (নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত)। এছাড়া পুরাতন 'সমাজসেবা সম্পাদক' ও 'উপ-সমাজসেবা সম্পাদক' পদ দুটি রূপান্তর করে—সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক; সহ-সমাজসেবা, পরিবেশ ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
এমফিল এবং পিএইচডি শিক্ষার্থীরাও ভোটার
নতুন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেবল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ও আবাসিক হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন। যারা স্নাতক, মাস্টার্স, এমফিল অথবা পি.এইচ.ডি. কোর্সে অধ্যয়নরত এবং আবাসিক হলের সঙ্গে যুক্ত, তারাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর।
সান্ধ্যকালীন, এক্সিকিউটিভ, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, ভাষা কোর্সের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বা সংযুক্ত কলেজ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ভোটার বা প্রার্থী হতে পারবেন না। এছাড়া এমফিল/পিএইচ.ডি. কোর্সে থাকলেও কেউ যদি শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন, তাহলে তার সদস্যপদ বাতিল হবে।
এদিকে এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী বিষয়টি বাতিল করার দাবি উঠেছে। গত ১২ আগস্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চবি শাখার নেতাকর্মীরা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের জন্য দুইবার সকল ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। তখন সিদ্ধান্ত হয়, চাকসুর প্রার্থিতা শুধুমাত্র নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু সংশোধিত গঠনতন্ত্রে এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদেরও ভোটার এবং প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে এবং বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্বের প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী। তারা বেশকিছু সংস্কারও দাবি করে।
চবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান টিবিএসকে বলেন, "আমরা পূর্ণ প্যানেল দেব। সৃজনশীল শিক্ষার্থী, আমাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সমন্বয়ে প্যানেল গঠন করা হবে। আর নির্বাচনের পরিবেশ বিবেচনা করে আমাদের পদক্ষেপ থাকে। এমফিল ও পিএইচডি নিয়ে প্রশাসনের দ্বিচারিতা লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বর্তমান প্রক্টর একটি দলের পক্ষপাতদুষ্ট। তাঁর অধীনে নির্বাচনে যাবো কিনা, সেটিও বিবেচনা করা হবে।"
ইসলামী ছাত্রশিবির চবি শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী টিবিএসকে বলেন, "আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নিজেদের জনশক্তির পাশাপাশি বিভিন্ন, ক্লাব, সামাজিক সংগঠন, অ্যাক্টিভিস্ট, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন মানুষসহ সব শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হবে। আমাদের প্যানেল জোটও হতে পারে।"
এমফিল ও পিএইচডির বিষয়ে চবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, "১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে এমফিল ও পিএইচডিতে অধ্যায়নরতরা নিয়মিত শিক্ষার্থী। তাদের অধিকার আইন দিয়েছে। আমরা থেকে বঞ্চিত করতে পারি না। তবে ৩০ বছরের অধিক ও শিক্ষকরা অংশ নিতে পারবে না।"
চাকসু প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ছয়বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর ছাত্রনেতা ফারুকুজ্জামান খুন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাকসুর কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।