হাসিনা-এসকে সিনহাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে সাঈদী মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ দায়ের

মুক্তিযুদ্ধের সময় হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে আলোচিত সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি গুম, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্তসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধ অভিযোগ আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় উপস্থিত হয়ে এই অভিযোগ দাখিল করেন।
বিষয়টি প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম নিশ্চিত করেছেন।
প্রসিকিউটর তামিম বলেন, 'তিনি চিফ প্রসিকিউটর অফিসে অভিযোগ দাখিল করেছেন।'
অভিযোগে বলা হয়েছে, তাকে অপহরণ করে আটকে রাখা হয়েছিল, গুম ও নির্যাতন করা হয় এবং দীর্ঘদিন ভারতের কারাগারে তাকে আটক রাখা হয়েছিল।
সুখরঞ্জন বালি ছিলেন সাঈদী মামলার রাষ্ট্রপক্ষের একজন সাক্ষী। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে এসে তিনি আদালতে সাঈদীর পক্ষে বক্তব্য দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি আদালত চত্বর থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। পরে, তাকে ভারতের একটি কারাগারে পাওয়া যায় বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
অনেক দিন নিখোঁজ থাকার পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর দীর্ঘ সময় পর তিনি প্রকাশ্যে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের অভিযোগ দায়ের করলেন।
তার অভিযোগ অনুযায়ী, ওই সময় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে তাকে অপহরণ, আটকে রাখা ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
তিনি মনে করেন, এ ঘটনায় আইনি প্রতিকার পাওয়ার অধিকার রয়েছে তার।
তিনি প্রসিকিউশন অফিসে এ সংক্রান্ত পুরো বিবরণসহ লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগটি যাচাই-বাছাই শেষে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না—তা এখন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই মামলাকে কেন্দ্র করে সাক্ষী নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
সুখরঞ্জন বালি সাংবাদিকদের বলেন, 'সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেওয়ার জন্য প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হয় তাকে। ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে এলে সাদা পোশাকধারী পুলিশ মাইক্রোবাসে করে তাকে তুলে নিয়ে যায়।'
তিনি দাবি করেন, তাকে গুম করে রাখা হয় ২ মাস ১৭ দিন। পরে সীমান্ত পারাপার করে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সুখরঞ্জন বালিকে। সেসময় ভারতে ৫ বছর জেলে ছিলেন তিনি।