এজেন্সির সংখ্যা সীমিতকরণের পক্ষে মালয়েশিয়া: আসিফ নজরুল

প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে যাতে কোনো সিন্ডিকেট সুযোগ না পায়, সে বিষয়ে সরকার সতর্ক রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সব এজেন্সির অংশগ্রহণ চাইলেও, মালয়েশিয়া পক্ষ এ সংখ্যা সীমিত রাখতে চাইছে।
গতকাল বুধবার (২০ আগস্ট) প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক বছরের অর্জন তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে প্রায় ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট কাজ করেছে। আবারও শ্রমবাজার খোলার প্রক্রিয়া শুরু হলে একই প্রশ্ন উঠেছে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মধ্যে।
বর্তমানে বাংলাদেশে নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সির সংখ্যা প্রায় ২,৫০০।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে উঠে আসে—মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ব্যবহৃত এফডব্লিউসিএমএস সফটওয়্যারের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মালয়েশিয়ান নাগরিক আমিন নুরকে সিন্ডিকেটের মূল নায়ক হিসেবে পরিচিত করা হয়। এক সংবাদপত্রের তথ্যমতে, তিনি নতুন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সমাধান এনেছেন এবং দাবি করছেন এটি দিয়ে সীমিতসংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে 'জিরো কষ্টে' কর্মী পাঠানো সম্ভব। এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয় উপদেষ্টার কাছে।
উত্তরে আসিফ নজরুল বলেন, "আমিন নুর একজন মালয়েশিয়ান নাগরিক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে সেখানকার বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করছেন। মালয়েশিয়া সরকার যদি তাকে কোনো দায়িত্ব দেয়, বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তবে বাংলাদেশ সরকার সতর্ক আছে এবং কেবল বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকেই তথ্য নিচ্ছে।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, "বাংলাদেশ কোনোভাবেই সিন্ডিকেটভিত্তিক বা দুর্নীতিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় যেতে চায় না। সরকার সর্বোচ্চ সতর্ক আছে যেন কোনো অনিয়মের সুযোগ না হয়।"
তিনি আরও বলেন, "মালয়েশিয়া সীমিতসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সিকে প্রাধান্য দিতে চায়—এটাই মূলত 'সিন্ডিকেট' বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশ সব এজেন্সিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে চাইলেও মালয়েশিয়া পক্ষ সীমিত রাখার পক্ষে। তাই কিছু এজেন্সিকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে, তবে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আলোচনা চলছে।"
আসিফ নজরুল বলেন, "মালয়েশিয়া পক্ষ যুক্তি দিচ্ছে—অন্য ১৩টি শ্রম সরবরাহকারী দেশে এত এজেন্সি নেই। আমরা তাদের বলেছি, অন্য দেশগুলোকে যতগুলো অনুমোদন দাও, বাংলাদেশকেও সে পরিমাণ দাও।"
সবশেষে তিনি সতর্ক করে বলেন, "যারা শ্রমিক পাঠানোর দায়িত্বে থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম প্রমাণিত হলে ভবিষ্যতে অনেকের বিদেশযাত্রা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সরকার একটি সংগঠিত, স্বচ্ছ ও ন্যায্য প্রক্রিয়ায় কর্মী প্রেরণ নিশ্চিত করতে কাজ করছে।"
'ওইপি' চালু
এদিকে, একইদিনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-র সহযোগিতায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিনামূল্যে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে 'ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট প্ল্যাটফর্ম (ওইপি)' উদ্বোধন করেছে।
ডিজিটাল এই প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধনকালে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, "পূর্বে 'আমি প্রবাসী' অ্যাপের মাধ্যমে বিদেশগামীদের নিবন্ধন, ক্লিয়ারেন্স কার্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করতে প্রায় ৭৫০ টাকা করে খরচ হতো। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। নতুন এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিদেশগামীরা বিনামূল্যে অনলাইন সেবা নিতে পারবেন।"
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টার সাবেক একান্ত সচিব সারওয়ার আলম বলেন, "এটি একটি সমন্বিত অনলাইন ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে বিদেশে কর্মসংস্থানপ্রত্যাশী ব্যক্তি, রিক্রুটিং এজেন্সি, বিদেশি নিয়োগকর্তা, বাংলাদেশ মিশন এবং বিএমইটি প্রশিক্ষণ ও ছাড়পত্র প্রদানসহ বিভিন্ন সেবা গ্রহণ ও প্রদান করতে পারবেন।"
তিনি জানান, সরকারের নিজস্ব এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শতভাগ অনলাইনে বিএমইটি সরাসরি বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান করছে। এর ফলে বিদেশ গমনেচ্ছু কর্মীরা স্বল্প সময়ে এবং কম অভিবাসন ব্যয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশ যেতে পারছেন।
এছাড়া, দেশের ২১টি জেলার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস (ডিইএমও) থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।