একটি ‘গ্রহণযোগ্য, আনন্দদায়ক’ নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, যদি নির্বাচন বৈধ না হয়, তাহলে তা দেওয়ার কোনো অর্থ নেই।
গত বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে সিঙ্গাপুরভিত্তিক চ্যানেলনিউজএশিয়া (সিএনএ) টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, 'আমার কাজ হলো- একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ ও আনন্দদায়ক নির্বাচন নিশ্চিত করা।'
অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার শেষ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। এ সংস্কার আগামী ফেব্রুয়ারিতে বৈধ ও স্বাধীন নির্বাচনের জন্য জরুরি শর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশের প্রথম নির্বাচন, যা এক বছরেরও বেশি সময় আগে হওয়া সহিংস আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ইউনূস বলেন, সরকার নিজ লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন। 'অনেক কিছু সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল, কারণ আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছিল প্রভাবিত, ভুলভাবে ব্যবহার করা ও অপব্যবহৃত।'
ছাত্র আন্দোলন দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করেছিল। আন্দোলনকারীরা নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের আক্রমণেরও শিকার হয়েছেন। তাদের এ দমন-পীড়নে এক হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।
শেখ হাসিনার ১৫ বছরের আমলে ব্যাপক দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশে বাধা দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে। তিনি বর্তমানে ভারতে আছেন এবং তার অনুপস্থিতেই তার বিচারকাজ চলছে।
ঢাকা সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করলেও, ভারত প্রত্যর্পণের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। এছাড়া, হাসিনা তার সমর্থকদের অনলাইনে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে। ইউনুস সিএনএকে জানান, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ভারত সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে বের করার জন্য কোনো লড়াইতে যাবো না। আমরা বলেছি, 'আপনারা তাকে রাখতে পারেন। আমাদের বিচার চলবে।'
তিনি আরও বলেন, তবে তাকে এমন সুযোগ দেওয়া যাবে না যাতে তিনি আবারও বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করেন। বাংলাদেশে তার এখনো অনেক অনুসারী আছে – তারা আগের মতোই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে।'
সিএনএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনার আমলে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল।
কিন্তু নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতি কিছুটা দিল্লি থেকে দূরে সরে গেছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।
গত মার্চে বেইজিং সফরে যান ইউনূস এবং সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার প্রবেশপথ হিসেবে কৌশলগত গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি তার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে বলেন, সিদ্ধান্তগুলো অর্থনৈতিকভাবে পরিচালিত এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী যে কারও সাথে কাজ করতে তিনি ইচ্ছুক।
ইউনূস বলেন, 'আমাদের পাকিস্তান এবং চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে এবং আমরা ভারতের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক চাই।'
তিনি আরও বলেন, 'এটি কোনো বিশেষ চীনা নীতি নয়। এটি ভারতের জন্যও প্রযোজ্য, যে কেউ এই সুযোগ নিতে চায় তাদের জন্যও। এটি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে একটি ন্যায্য খেলা।'
শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস আন্দোলনের পর প্রধান উপদেষ্টার পদে যোগ দেন। তিনি জানান, প্রথমে তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অনিচ্ছুক ছিলেন।
তিনি বলেন, '(ছাত্র নেতারা) আমার কাছে এ দাবি জানিয়েছিল যে এত রক্তপাত হয়েছে … এটা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়েছে … তারা এত ত্যাগ করেছে, তাই ভেবেছি আমার নিজেরও কিছু করা উচিত। তাই আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।'
৮৫ বছর বয়সী ইউনূস বলেন, তিনি নির্বাচনের পরে আর সরকারে থাকতে চান না।
রাজনীতি থেকে সরে যাওয়ার পরিকল্পনার মধ্যে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে তার নেতৃত্ব দীর্ঘস্থায়ী ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
তিনি বলেন, 'আমি আশা করব, এখন থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে থাকবে, আর কখনো বিপথগামী হবে না।'