জোরপূর্বক অপুকে দিয়ে চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তির ভিডিও বানিয়েছেন ইশরাক, সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জানে আলম অপুকে অপহরণ করে জোরপূর্বক মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী।
আজ (১৪ আগস্ট) সকাল ১১টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন অপুর স্ত্রী কাজী আনিশা।
আনিশার দাবি, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১ আগস্ট সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত জানে আলম অপু নিখোঁজ ছিলেন। রাত সাড়ে ১১টায় তাকে একটি মোটরসাইকেলে করে রাজধানীর একটি বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোরপূর্বক ভিডিও করানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আনিশা জানান, গত ৮ আগস্ট কারাগারে অপুর সঙ্গে তার দেখা হয়। তখন অপু তাকে বলেন, 'আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভিডিও করা হয়েছে, যেকোনো সময় তা প্রকাশ হতে পারে। কিছু করার থাকলে এখনই করো।'
বিএনপি নেতা ইশরাকের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে তিনি বলেন, '৩১ তারিখ রাত সাড়ে ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত অপুকে যে বন্দী করে রাখলো, সেখানে যে ওর স্বীকারোক্তি নিল—এই স্বীকারোক্তি নিল কারা এবং গোপীবাগ কার বাসা? ইশরাক ভাইয়ের বাসা না? অপুকে তো ইশরাক ভাইয়ের বাসার সামনে থেকেই ধরছে। কয়েকটা ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে, এগুলো তো ইশরাক ভাইয়ের বাসাতেই। এখানে তো সন্দেহের কিছু নাই। অপুকে নিয়ে ইশরাক ভাই জোর করে এগুলা করাইসে।'
৩৫ মিনিটের অপুর ওই স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিওটি অপুকে শিখিয়ে দিয়ে কাটছাঁট করে প্রকাশ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
স্বামীর ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এনে তিনি বলেন, 'অপুকে সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে গোপীবাগ থেকে, আর সকালে সাড়ে ১১টায় অ্যারেস্ট [গ্রেপ্তার] দেখানো হয়েছে। এই চার ঘণ্টায় অপুকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ আমাদের অপুর কোনো সন্ধান দেয় নাই। তারা সকাল সাড়ে ১১টার পর যখন মিডিয়া জেনেছে, তারপর থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অপুকে নিয়ে ঘুরেছে। তারা অপুকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও কোর্টে উঠায় নাই।'
৬ আগস্ট রিমান্ডের পর আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া হলেও সেখানে অপু কোনো ব্যক্তির নাম স্বীকার করেননি বলেও জানান তার স্ত্রী।
এই ঘটনাকে সাজানো পরিকল্পনা উল্লেখ করে তার স্ত্রী বলেন, 'অপু জানতো না পরের ঘটনা কী হবে, পরে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটবে কিনা। এটা পুরোটাই একটা প্ল্যান ছিল। সমন্বয়ক বা এনসিপির নেতাদের দাবায় রাখার জন্য একটা নির্দিষ্ট দল ওদের পেছনে লেগে আছে। কারণ ওদেরকে ব্যবহার করে অনেক বড় একটা স্বার্থসিদ্ধি করতে পারে।
'প্রত্যেকটা দল তাদের বিরুদ্ধে কথাবার্তা লিখে তাদেরকে দাবায় নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে। সে উদ্দেশে অপুকে ফাঁসানো হয়েছে। ওই বাসায় অপুকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অপুরা নিজে থেকে শাম্মি আহমেদের বাসায় যায় নাই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি বলব অপু পুরোপুরি মিডিয়া ট্রায়ালের স্বীকার হয়েছে। রিমান্ডে দুই হাজার পুলিশ হত্যা মামলায় অপুর নাম ঢোকানোর ভয় দেখিয়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করা হয়েছে। আমাদের স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও দিয়েও পুলিশ ব্ল্যাকমেইল করার হুমকি দিয়েছে। অপুকে চারদিন রিমান্ডে নিয়েছে একটা নাম বের করার জন্য। এভাবে যে কেউ মানুষ, যা-তা স্বীকার করতে রাজি হয়ে যাবে।'
উল্লেখ্য, সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে সাবেক এমপি শাম্মি আহমেদের বাসায় চাঁদা আদায়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার জানে আলম অপুর ৩৫ মিনিটের একটি স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, 'উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা মব তৈরি করে চাঁদাবাজির সাথে জড়িত।'
গত ১ আগস্ট (শুক্রবার) সকালে রাজধানীর ওয়ারী এলাকা থেকে অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়।