লুট হওয়া পাথর ৭ দিনের মধ্যে প্রতিস্থাপনের নির্দেশ হাইকোর্টের; লুটপাটে জড়িতেদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ

সিলেটের ভোলাগঞ্জ থেকে লুট হওয়া সাদা পাথর আগামী সাত দিনের মধ্যে আগের জায়গায় প্রতিস্থাপনের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়াও এই পাথর লুন্টনকাজে জড়িতদের তালিকা প্রস্তুত করে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে সাদা পাথর লুটপাটের সংবাদ প্রকাশির হলে জনস্বার্থে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস এন্ড পিচ ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) বৃহস্পতিবার জনস্বার্থে একটি রিট দায়ের করে। সেটির ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা রিটটি জনগুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এই আদেশ দেন।
পরিবেশ সচিব, খনিজ সম্পদ সচিব, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপরসহ সংশ্লিষ্টদেরকে আদেশ বাস্তায়ন করতে বলেছেন আদালত।
শুনানিতে এইচআরপিবি'র পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ শুনানি করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কয়েকদিন থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিলেটের ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর গায়েব হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অনেকদিন থেকেই স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় প্রশাসনের নাকের ডগায় পাথরগুলো নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। সেসব রিপোর্ট যুক্ত করে রিট করা হয়।
তিনি বলেন, ওই এলাকাটি একটি টুরিস্ট স্পট হিসেবে বিবেচিত এবং হাজার হাজার মানুষ সাদা পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য আসেন। এগুলো সংরক্ষণের জন্য পরিবেশ আইনের ৫ ধায়ায় ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণার নির্দেশনার প্রার্থনা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দিনে দুপুরে এভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাঠের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি আমাদের সংবিধানের আর্টিকেল ১৮ (এ) এর নির্দেশনা অনুসারে প্রশাসনের দায়িত্ব এগুলো সংরক্ষণ করা।
শুনানি শেষে আদালত সিলেটের ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর উত্তোলন ও অপসারণ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; উক্ত সাদা পাথর এলাকা সংরক্ষণের জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; উক্ত এলাকাকে পরিবেশ আইনের ৫ ধারা অনুসারে ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যাল এরিয়া ঘোষণার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না; পরিবেশের ক্ষতির সমপরিমাণ অর্থ দায়ী ব্যক্তিদের নিকট থেকে আদায়ের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
আদেশের বিষয়ে মনজিল মোরসেদ বলেন, 'হাইকোর্ট আদেশে বলেছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে বিবাদীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া উক্ত সাদা পাথর স্থানীয় সিভিল প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগীতায় সংগ্রহ করে ভোলাগঞ্জের উক্ত নির্দিষ্ট স্থানে সাদা পাদরগুলোকে প্রতিস্থাপন করতে হবে। আগামী
বৃহস্পতিবারের (২১ আগস্ট) মধ্যে এ ব্যাপারে তাদের পদক্ষেপ এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির গঠনের বিষয়ে আদালত নির্দেশনায় বলেছেন, জেলা প্রশাসন, বিজিবি, র্যাবসহ মোট পাঁচ জনকে সাদা পাথর লুটপাঠের সঙ্গে জড়িত বাক্তিদের তালিকা তৈরি করে এফিডেভিট আকারে দুই মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে হবে।
এছাড়াও, পরিবেশ সচিব ও খনিজ সম্পদ সচিবকে আগামী সাত দিনের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন যেখানে বুয়েটের একজন প্রফেসর থাকবেন তাদের মাধ্যমে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে উক্ত ঘটনায় তা নিরূপন করে তিন মাসের মধ্যে এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সংশ্লিষ্টদেরকে ওই এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিন ও রাত্রে তদারকির জন্য মনিটরিং টিম গঠন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে।