নওগাঁয় সরকারি জমি দখল করে তিন ছাত্রনেতার রেস্টুরেন্ট, সাবেক ইউএনওর সম্পৃক্ততার অভিযোগ

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) কোটি টাকার সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল করে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন ছাত্র প্রতিনিধি—রিপন, ফাহিম ও সজিব এই জমি দখল করে 'মান্দা রিভার কোর্ট' নামে রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলেছেন।
স্থানীয়দের মতে, নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের আত্রাই নদীর ফেরিঘাট ব্রিজসংলগ্ন ওই জমির বাজারমূল্য এক কোটি টাকার বেশি। মান্দায় বাড়ি হলেও তিন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন নওগাঁ সদরসহ অন্য এলাকায়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা প্রশাসনের শেল্টারে আধাপাকা স্থাপনা নির্মাণের সময় বাধা দিতে গেলে পুলিশি হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখানো হয়। এমনকি দাবি করা হয়, জমিটি সড়ক বিভাগ থেকে ১০০ বছরের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। রেস্টুরেন্টে প্রবেশের জন্য সড়কের একটি অংশও কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত মান্দায় ইউএনও ছিলেন শাহ আলম মিয়া। এ সময় তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে ওই তিন ছাত্র প্রতিনিধির। অভিযোগ, বদলির আগে গত ১৪ জুলাই তিনি 'উপহার' হিসেবে জমিটি তাদের দখলে দেন। উদ্বোধনী নামফলকে নিজের পরিকল্পনার বিষয় উল্লেখ করে উদ্বোধক হিসেবে নওগাঁর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আব্দুল আউয়ালের নামও যুক্ত করান তিনি।
তবে ফাহিম রহমান দাবি করেন, অবৈধভাবে রেস্টুরেন্ট নির্মাণের অভিযোগ সঠিক নয়। চলতি বছরের এপ্রিলে লিজের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং প্রক্রিয়া এগিয়েছে। শাহ আলম মিয়া তাদের সার্বিক পরামর্শ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। রিপন বলেন, স্থায়ী স্থাপনা নয়, কংক্রিটের ভিতের ওপর টিনশেড দিয়ে রেস্টুরেন্ট চালানো হচ্ছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় ব্যবহার করা হয়নি।

সংগঠনটির নওগাঁ শাখার ছাত্রনেতা ফজলে রাব্বী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম; প্রশাসনের সঙ্গে লেনদেন করে অবৈধ সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাবেক ইউএনও শাহ আলম মিয়া বর্তমানে প্রশাসন একাডেমিতে উপপরিচালক পদে কর্মরত আছে। অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এই বিষয়ে আমি বিস্তারিত জানতাম না। আমি দাওয়াতে গিয়েছিলাম। ইউএনও থাকলে এমন অনেক দাওয়াতে অংশগ্রহণ করতে হয়। সব খোঁজ খবর নেওয়া সম্ভব হয় না।'
সওজ নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল হক জানান, তরুণ উদ্যোক্তা পরিচয়ে কয়েকজন আবেদন করেছিলেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এর মধ্যে স্থাপনা নির্মাণ সম্পূর্ণ আইনবহির্ভূত, যা উচ্ছেদে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ডিসি আব্দুল আউয়াল বলেন, 'রেস্টুরেন্ট উদ্বোধনের বিষয়ে সাবেক ইউএনও তাকে জানিয়েছিলেন, তবে নামফলকে নিজের নাম থাকার বিষয়ে কিছু জানাননি। পরে বিষয়টি নজরে এলে নামফলক অপসারণ ও অনুমতিপত্র সাপেক্ষে কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন।'