হাসপাতালের বিল দিতে না পেরে নবজাতককে রেখে পালিয়ে যান দম্পতি, ১৬ দিন পর কোলে ফিরিয়ে দিল পুলিশ

হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে না পেরে নবজাতক শিশুকে রেখে পালিয়ে যান এক দম্পতি। পরে পুলিশ তাদের খুঁজে বের করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। টানা ১৬ দিন পর আবার মেয়েকে পেয়ে বুকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের ওআর নিজাম উদ্দিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে।
জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে এক সিএনজি চালক স্ত্রীকে নিয়ে আসেন এশিয়ান হাসপাতালে। সেই রাতেই সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারে জন্ম নেয় তাদের মেয়ে সন্তান। তবে জন্মের পর কিছু শারীরিক জটিলতা থাকায় শিশুকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) রাখা হয়।
চার দিন পর ২২ জুলাই মাকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাড়পত্র দেয়। তখন পর্যন্ত বিল দাঁড়ায় ৪৬ হাজার টাকা, যার মধ্যে ৪০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারেন তারা। কিন্তু বাচ্চা তখনও এনআইসিইউতে ভর্তি।
বাকি টাকা পরিশোধের আর সামর্থ্য ছিল না তাদের। একপর্যায়ে সন্তানকে রেখে চুপিচুপিই হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান তারা।
হাসপাতালের পরিচালক রিদওয়ানুল হক জানান, শিশুটি পরে সুস্থ হয়ে উঠলেও বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না। 'ওকে বুকের দুধ দেওয়ার কেউ ছিল না। অন্য মায়েদের সাহায্যে দুধ খাওয়ানো হতো,' বলেন তিনি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১ আগস্ট চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়। এরপর পুলিশ রাউজান ও রাঙ্গুনিয়ায় ওই দম্পতির আত্মীয়স্বজনের ঠিকানায় অনুসন্ধান শুরু করে।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর জানান, পুলিশ পরে পরিবারটির অবস্থান শনাক্ত করে এবং তাদের চট্টগ্রামে আনার ব্যবস্থা করে।
ওসি বলেন, ততদিনে ১৯ দিনে হাসপাতালে বিল দাঁড়ায় ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। ভয়ে হাসপাতালে আসছিলেন না তারা। ভেবেছিলেন পুরো টাকাই পরিশোধ করা লাগবে। কিন্তু এত দরিদ্র যে তাদের পক্ষে এ টাকা পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না।
'ঘটনাটি আমাদের সবার জন্য আবেগময় ছিল। পরিবারটিকে সন্তানসহ এক করতে পেরে আমরা খুবই খুশি', যোগ করেন ওসি।
তিনি জানান, পরে এক সহৃদয় ব্যক্তি ১৫ হাজার টাকা দেন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাকি বিল মওকুফ করে দেয়।
ওসি আরও বলেন, 'আমরা হাসপাতালকে আশ্বস্ত করেছি, প্রয়োজনে জনসাধারণের সহায়তায় পুরো বিল জোগাড় করব।'
বুধবার বিকেলে সন্তানকে আবার ফিরে পেয়ে মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মেয়েকে বুকে নিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতিদিন কাঁদতাম। এখানে রেখে যেতে হয়েছিল, কিন্তু ফেরার মতো সামর্থ্য ছিল না।'
শিশুর বাবা ওই দিন উপস্থিত ছিলেন না। তবে মুঠোফোনে তিনি বলেন, 'সিজারে [অস্ত্রোপচার] ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। এরপর আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। তাই হাসপাতালের সামনে যাওয়ার সাহসও হয়নি।'
হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহউদ্দিন আলী বলেন, অস্বচ্ছল রোগীদের ক্ষেত্রে বিল সর্বোচ্চ পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
তিনি বলেন, 'ওরা যদি আগে জানাত, আমরা সহযোগিতা করতাম। অর্থের অভাবে কোনো পরিবারকে সন্তান ফেলে যেতে হওয়া উচিত নয়।'