জুলাই ঘোষণাপত্রে বিগত তিন নির্বাচন ও এক-এগারো নিয়ে যা আছে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস 'জুলাই ঘোষণাপত্র' পাঠ করেছেন আজ। এতে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এক-এগারো এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ঘোষণাপত্রের ৬ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, দেশি-বিদেশি চক্রান্তে গণতান্ত্রিক সরকার পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ হওয়ায় এক-এগারো ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাস্তবায়িত হয়, যা শেখ হাসিনার একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ বছরে দেশে ফ্যাসিবাদী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে সংবিধানে অবৈধ ও দলীয় স্বার্থে পরিবর্তন আনা হয়।
ঘোষণাপত্রে অভিযোগ করা হয়, 'শেখ হাসিনার সরকারের দুঃশাসন, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ এবং একদলীয় স্বার্থে সংবিধান পরিবর্তনের কারণে দেশের রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।'
এতে আরও বলা হয়, 'গত প্রায় ১৬ বছর ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দল, ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, খুন, হামলা-মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে।'
বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ নিয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, 'বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব ও শোষণের বিরুদ্ধে দেশের মানুষের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুরভাবে শক্তিপ্রয়োগের মাধ্যমে দমন করেছে।'
আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গে ১৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের 'প্রহসনের নির্বাচন'-এর মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করেছে।
ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, আওয়ামী লীগ শাসনামলে ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, শিক্ষার্থী ও তরুণদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে। সরকারি চাকরিতে দলীয় নিয়োগ ও কোটাভিত্তিক বৈষম্যের কারণে চাকরি প্রত্যাশী ও নাগরিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের জন্ম হয়।'
ঘোষণাপত্রে দাবি করা হয়, বিরোধী দল ও সংগঠনের ওপর দীর্ঘদিনের নিপীড়নের ফলে জনরোষ তৈরি হয় এবং জনগণ সব বৈধ উপায়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায়।
গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গে বলা হয়, 'দলীয় নিয়ন্ত্রিত বৈষম্যমূলক কোটাব্যবস্থা বাতিল ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান ছাত্র-আন্দোলনে সরকার নির্মম দমন-পীড়ন চালায়। এর ফলে দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, যা শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়।'
উপরোক্ত কারণ বর্ণনা করে জুলাই ঘোষণাপত্রের ২৭ নম্বরে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশের জনগণ এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে যে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে এবং পরবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের সংস্কারকৃত সংবিধানের তফসিলে এ ঘোষণপত্র সন্নিবেশিত থাকবে।'
উল্লেখ্য, এর আগে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছিলেন।