নির্বাচন বিলম্বিত করে কিছু দল ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায়: মেজর হাফিজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন বিলম্বিত করে ক্ষমতার স্বাদ নিতে চাইছে, কারণ সরাসরি নির্বাচনে তাদের জয়ের সম্ভাবনা নেই।
তিনি অভিযোগ করেন, এসব দল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংকগুলোতে নিজেদের লোক বসিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সুযোগ ভোগ করছে, যা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারবিরোধী।
শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ মিলনায়তনে বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত 'বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভাটি ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত হয়।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে মেজর হাফিজ বলেন, 'আমরা চাই একটি সঠিক, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। জনগণ যদি বাধাহীনভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ইনশাআল্লাহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে।'
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তখন জনগণ ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। একইভাবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের সাধারণ মানুষ, ছাত্রসমাজ, রাজনৈতিক কর্মী ও ব্যবসায়ীরা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়েছে। দুটি ঘটনাই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামের বিজয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।'
অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, 'যারা এখন সংস্কার প্রস্তাব দিচ্ছেন, তাদের অনেকে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত। তাদের জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা গণতন্ত্রের পরিপন্থি।'
তিনি বলেন, 'বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ৫ আগস্টের আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখেননি, কেবল যোগাযোগের কারণে তারা সরকারে এসেছেন। প্রথম দিকে তাদের ধারণা ছিল শেখ হাসিনার সরকারের বাকি মেয়াদ পূর্ণ করা উচিত।'
সরকারের উদ্দেশে তিনি অভিযোগ করেন, 'এই সরকার এখন নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যস্ত। জনগণের মুক্তি বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কোনো রূপরেখা তারা দেয়নি। বরং নানা বিলাসে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এয়ার কন্ডিশন গাড়ি, বিদ্যুৎবিল ছাড়া সুযোগ-সুবিধা পেয়ে তারা এখন আর জনগণের কথা ভাবছে না।'
গণভোটের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গণভোটের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। জনগণকে বলা হচ্ছে "হ্যাঁ" বা "না" বলো; এতে তাদের স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ সীমিত হয়।'
তিনি আরও জানান, বিএনপি, জুলাই সমাজসহ বিভিন্ন দল একসঙ্গে একটি সনদে স্বাক্ষর করেছে যে নির্বাচনের পর সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তারা সেই সনদ বাস্তবায়ন করবে। 'তাহলে আবার গণভোটের প্রয়োজন কোথায়?'—প্রশ্ন রাখেন মেজর হাফিজ।
তার মতে, সব রাজনৈতিক দল একসঙ্গে বসে ২৮ দফা বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছে একটি 'জুলাই সনদ' তৈরি করলে সেটিই ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের যৌক্তিক পরিণতি হতো।
