জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষের উপস্থিতিতে উপস্থাপন করবে সরকার

অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করেছে।
আজ (২ আগস্ট) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ৫ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেল ৫টায় গণ-অভ্যুত্থানের সকল পক্ষের উপস্থিতিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত অবিলম্বে ঘোষণা করা হবে বলেও জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, 'কমরেডস, ৩১ ডিসেম্বর! নাউ অর নেভার।'
এর কিছুক্ষণ পরে আরেকটি পোস্টে তিনি লেখেন, 'প্রক্লেমেশন অব জুলাই রেভল্যুশন, ৩১ ডিসেম্বর, শহীদ মিনার, বিকেল ৩টা।'
এরপরই জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তৎকালীন নেতারা 'সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই প্রক্লেমেশন'সহ নানা শব্দ ব্যবহার করে প্রচারণা ও অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম ঘোষণা দেন- ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।
এর আগেও আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র জারির কথা বলেছিল।
জুলাই ঘোষণাপত্র কী, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত নিয়ে ভিন্নমত
জুলাই ঘোষণাপত্র হচ্ছে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র।
এ ঘোষণাপত্রে কী কী উল্লেখ থাকবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আছে। একই সঙ্গে সেটা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা নিয়েও রয়েছে ভিন্নমত।
সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে জুলাই ঘোষণাপত্রের স্বীকৃতি ও কার্যকারিতা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এ বিষয়ে গত ১১ জুলাই দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছিলেন, 'আমরা বাংলাদেশে নতুন একটি সংবিধান প্রত্যাশা করি। এনসিপি মনে করে, নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, সেই নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনায় জুলাই ঘোষণাপত্র সংযুক্ত করতে হবে। সেই জুলাই ঘোষণাপত্র রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির জায়গায় জুলাই ঘোষণাপত্রের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে।'
অন্যদিকে জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানের মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে একমত নয় বিএনপি।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘোষণাপত্রের পুরোটা না নিয়ে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনাটুকু ধারণ করে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য চতুর্থ তফসিলে শুধু 'জুলাই অভ্যুত্থান ২০২৪' আনা যেতে পারে।
গত ১০ জুলাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। তখন কিন্তু স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের কার্যকারিতা শেষ। সেই ঘোষণাপত্র চতুর্থ তফসিলে এসে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, প্রতিটি আইন কিন্তু সংবিধানে উল্লিখিত নয়। বলা হলো, এটা তফসিলে থাকবে, এটাই লেজিটিমেসি (বৈধতা), স্বীকৃতি।
তিনি আরও বলেন, ঘোষণাপত্র লিটারেচার হিসেবে, ডকুমেন্টারি হিসেবে আর্কাইভে থাকে, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকে না। '৭২–এর সংবিধানে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রকে সংযুক্ত না করা এটা প্রমাণ করে, কোনো ঘোষণাপত্র সংবিধানের অংশ হয় না। ঘোষণাপত্র হলো ঘোষণাপত্র, এটার রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকে, এটা আর্কাইভে থাকে। এটাকে জাতি বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে উল্লেখ করে, স্মরণ করে।
'আমরা গণঅভ্যুত্থান ২০২৪–এর গুরুত্ব, মর্যাদা, মহিমা ধারণ করি। আমরা এটাকে স্বীকৃতি দিই, জাতি এটাকে স্বীকৃতি দেয়। এটাকে আমরা যথাযথ মর্যাদায় রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে চাই', বলেন সালাহউদ্দিন।
তিনি বলেন, 'জুলাই ঘোষণাপত্র সম্পর্কে একটা রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তেছে। সরকার এখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিয়ে এ ঘোষণাপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা ইতিপূর্বে সে রকম একটা প্রস্তাব পাওয়ার পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুজন উপদেষ্টার কাছে আমি নিজেই দলের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্রের বিষয়ে একটা ড্রাফট হস্তান্তর করেছিলাম। কিন্তু আমরা কোনো ফিডব্যাক পাইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'কয়েক দিন আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা আমাদের মহাসচিবের (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) সঙ্গে যোগাযোগ করে জুলাই ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত তাদের একটা প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা আগে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তার কিছু কিছু বিষয় এটার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমরা দলের সর্বোচ্চ ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করে একদিনের মধ্যে আমাদের দলের মতামত ডাফ্রট করে সরকারের সেই উপদেষ্টার কাছে পাঠাই। এখন পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হয়, আলাপ-আলোচনা কী হয়, সেটার জন্য অপেক্ষা করছি।'
বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্রকে চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আর্টিকেল ১০৬ অনুযায়ী গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ এবং কর্মকাণ্ডের বৈধতা চতুর্থ তফসিলে যুক্ত করে বৈধতা দেওয়া যেতে পারে।'