ছেলেকে অক্ষত পাওয়া গেলেও ৩ দিন ধরে নিখোঁজ মা

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আফসান ওহীকে (৯) অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেলেও তার মা আফসানা প্রিয়া (৩০) গত তিন দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান মেলেনি।
নিখোঁজ আফসানা প্রিয়া গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের মেদীআশুলাই এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল ওহাব মৃধার স্ত্রী।
তার স্বজনেরা জানিয়েছেন, আজ বুধবার (২৩ জুলাই) সকাল ১১টা পর্যন্ত দুর্ঘটনাস্থল, আশপাশের হাসপাতালসহ সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও তারা আফসানাকে পাননি।
আফসানার স্বামীর ছোট ভাই হাসিবুল হাসান বলেন, 'দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর আমরা আমাদের ভাবী ও তার সন্তান ওহীকে খোঁজাখুজি শুরু করি। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওহিকে পাওয়া যায় স্কুলের একটি কক্ষে। আল্লাহর রহমতে ওহি অক্ষত ও ভালো আছে। কিন্তু তার মা আফসানা প্রিয়াকে কোথাও পাওয়া যায়নি।'
তিনি বলেন, 'আমরা সেনা বাহিনীসহ সকল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। এখন তারা বলেছে, ডিএনএ দেওয়ার জন্য। পরে আমরা গত মঙ্গলবার ঢাকায় সিআইডির নিকট আফসানার পিতামাতার ডিএনএ দিয়েছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ওহি এখন শুধু তার মাকে খুঁজছে। আমরা তাকে কোনো সান্ত্বনা দিতে পারছি না। সে শুধু কান্নায় ভেঙে পড়ে জানতে চায়, আম্মু কোথায়? আমি আম্মুর কাছে যাব।'
পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য, ঘটনার দিন অন্যান্য দিনের মতো স্কুল ছুটির সময় ছেলেকে আনতে গিয়েছিলেন আফসানা প্রিয়া। ছেলের অপেক্ষায় অভিভাবক কক্ষে বসে ছিলেন তিনি। হয়ত ভাবছিলেন—ঘণ্টা বাজলেই ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু আকস্মিক বিস্ফোরণ আর আগুনে মুহূর্তেই বদলে যায় সব কিছু। অভিভাবক কক্ষের খুব কাছেই বিমান বিধ্বস্ত হয়। এরপরই শুরু হয় অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের বাঁচাতে ছোটাছুটি।
স্বজনেরা জানান, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরেছেন, কিন্তু আফসানা প্রিয়ার কোনো খোঁজ পাননি তারা।
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৬৮ জন, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, প্রাণ হারিয়েছেন ৩১ জন এবং আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তবে এখনও সিএমএইচ-এ রাখা ৬টি অজ্ঞাতনামা মরদেহ শনাক্ত হয়নি।