ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে মতপার্থক্য নেই: প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে আসিফ নজরুল

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ রাত ৯টায় চারটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাত সাড়ে দশটার দিকে এ বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো সরকারকে আশ্বস্ত করেছে যে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র মতপার্থক্য নেই।
গতকাল উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনা এবং এর প্রতিক্রিয়ায় আজ সচিবালয় ও উত্তরায় বিক্ষোভের পর এ বৈঠক ডাকা হয়।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশ নেয়।
বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, সব রাজনৈতিক দল বলেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র মতপার্থক্য নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য আছে— তার প্রমাণ হচ্ছে যখনই প্রধান উপদেষ্টা ডাকছেন- তখনই তারা আসছেন। তারা এটাও বলেছেন যে, ঐক্যবদ্ধ আছেন বলেই তারা নিয়মিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কেউ কেউ বলেছে, রাজনীতির মাঠে— রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আমরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে কথা বলতে পারি। এর মানে এটা না যে তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তারাও আমাদের রাজনৈতিক সহযোগী। রাজনীতির মাঠে মাঝেমধ্যে এমন কথা বলা হবে। এটা থেকে কোনভাবেই ধারণা করা উচিত না, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে আমাদের কোনরকম ফাটল আছে। এই ধারণা আমাদের করা উচিত না। রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে এবিষয়ে আমাদের (সরকারকে) আশ্বস্ত করা হয়েছে।
বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে অংশ নেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
এছাড়া, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
আসিফ নজরুল জানান, রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে দুটি বিষয় গুরুত্বসহকারে তুলে ধরা হয়। একটা হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার ক্ষেত্রে আমরা যেন আরো শক্ত অবস্থান নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ঘাটতি আছে বলে ওনারা মনে করছেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে সরকারের সুষ্ঠুভাবে অগ্রসর হওয়া উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে বলেছেন, আপনাদের মধ্যে ঐক্য আছে, এটা আরো দৃশ্যমান হলে ভালো হয়। সেটা ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রসঙ্গে হোক, গঠনমূলক কোনো কর্মসূচি— যে প্রসঙ্গেই হোক, আপনারা যদি একসাথে থাকেন, এটা মানুষ দেখলে তাদের মধ্যে স্বস্তি আসবে।
একাধিক সূত্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছে যে, আলোচনায় গোপালগঞ্জের সহিংসতা এবং মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সচিবালয়ে বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এবং মাইলস্টোন কলেজে সংঘটিত বিক্ষোভসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
সুত্রগুলো আরও জানায়, সব দলের নেতৃবৃন্দ একটা বিষয়ে একমত যে সরকার নানা ক্ষেত্রে দুর্বল আচরণ করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের আরও কঠোর হাতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা দরকার। এছাড়া, গোয়েন্দা ব্যর্থতা চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করার কথা উঠে আসে তাদের আলোচনায়।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করা হলে অনেক সমস্যা কমে যাবে। অন্যদিকে জামায়াত নেতারা বলেছেন, এখনো বহু অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা যায় নি।
বৈঠকের বিষয়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, আমরা পরিস্কার করে বলেছি বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের আর কোনো স্থান হবে না। এক ফ্যাসিবাদ গেছে। নতুন করে আর কোনো ফ্যাসিবাদ যেন তৈরি না হতে পারে— সে ব্যাপারে জাতি ঐক্যবদ্ধ থাকবে, (প্রধান উপদেষ্টাকে) আমরা সেই ব্যাপারে আমরা আশ্বস্ত করেছি। যেখানে ফ্যাসিবাদ, সেখানেই ঐক্য ও প্রতিরোধ।
তিনি আরও বলেন, চারটি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে আরো কয়েকজন উপদেষ্টা ছিলেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, কোনো একটা মহল থেকে বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনা হচ্ছে।
জামায়াত নেতারা বৈঠকে সরকারের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রাখার কথা উল্লেখ করেন, যাতে করে কোনো ঘটনা ঘটার আগেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
ইসলামী আন্দোলনের গাজী আতাউর রহমান বলেন, 'সচিবালয়সহ দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে আগে এমন নিরাপত্তাহীন অবস্থা থাকত না। তবে বর্তমানে একাধিকবার সচিবালয় অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা রয়েছে কি না, তা সরকারকে তদন্ত করে দেখতে হবে।'
তবে, বৈঠক শেষে বিএনপি ও এনসিপি নেতারা বাইরে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।