উত্তরায় মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: শিক্ষার্থীর চোখে ভয়াবহ সেই মুহূর্ত

উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারের শিক্ষার্থী হাসবিয়া রহমান আঝরা জানান, ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সময় তারা ক্লাসে ছিলেন। চারপাশ কেঁপে ওঠা বিকট শব্দ, আগুনে পুড়ে যাওয়া মানুষ আর বাচ্চাদের করুণ আর্তনাদ—এই সবই তিনি নিজের চোখে দেখেছেন।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের (টিবিএস) সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আঝরা বলেন, 'আমরা তখন ক্লাসে ছিলাম। আমাদের লাস্ট পিরিয়ড চলছিল, কিন্তু টিচার তখনও আসেননি। তাই আমরা কয়েকজন ক্লাসরুমেই আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই এক বিকট শব্দে পুরো ক্যাম্পাস কেঁপে উঠল।'
তিনি বলেন, 'প্রথমে বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। জানালার দিকে ছুটে গিয়ে দেখি একটি বিমান দগ্ধ অবস্থায় আমাদের ক্যাম্পাসের দিকে এগিয়ে আসছে। প্লেনটির পেছনের অংশে ইতোমধ্যেই আকাশে আগুন জ্বলছিল। সেটি দ্রুত নিচের দিকে নেমে আসছিল। মনে হচ্ছিল কোনোভাবে প্লেনটি ক্রাশ করবে।'
ওই শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা দেখলাম, মেবি ৫০০–৬০০ ফুট উপর থেকে পাইলট ঝাঁপ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তবে নিশ্চিত নই তিনি সফল হয়েছিলেন কি না।'
তিনি বলেন, 'এক সময় ভয়াবহ সেই প্লেনটি সরাসরি মাইলস্টোন স্কুলের এডি বিল্ডিং-এ আছড়ে পড়ে। এ বিল্ডিংটিতে ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করত। যাদের অনেকের ক্লাস তখনও শেষ হয়নি। কিছু ক্লাস ছুটি হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু লেভেল ওয়ান থেকে ফাইভ ও এইট পর্যন্ত ক্লাস চলছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা নিজের চোখে দেখেছি, প্লেনটি ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন জ্বলে উঠল। চারপাশে ধোঁয়া আর চিৎকার। কিছু শিক্ষক প্রাণপণ চেষ্টা করছিলেন বাচ্চাদের বের করে আনার। কিন্তু আগুন আর ধোঁয়ার কারণে অনেকেই আটকা পড়ে যায়।'
আঝরা বলেন, 'আমি পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিওতে দেখেছি, চারজন শিক্ষক সেই সময় বিল্ডিংয়ের ভেতরে বন্দী ছিলেন। তারা শেষ মুহূর্তে গ্রিল ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তাদের শরীরের অর্ধেক আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। আমাদের চোখের সামনেই কিছু ছোট্ট বাচ্চা আগুনে পুড়ে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল। সেই দৃশ্য কোনোদিন ভুলতে পারব না '
তিনি বলেন, 'আমাদের ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের সোনিয়া ম্যামের দুই সন্তানও সেই সময় বিল্ডিংটিতে ছিল। এক সন্তানের অবস্থা গুরুতর—একজনের পুরো পা পুড়ে গেছে।'
কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইম খান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা ক্লাসে ছিলাম, তখন হঠাৎ বিকট একটা শব্দ হয়। এরপর বাইরে এসে দেখি—এই ভয়াবহ অবস্থা। বের হওয়ার পর চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে দেখি, তার হাত পুড়ে গেছে। ওর মা তখন পাশে ছিলেন।'
তিনি বলেন, 'তিনি [শিক্ষার্থীর মা] আমাকে বলেন যে আমার মেয়েকে একটু হাসপাতালে নিয়ে যাও। ওর দুই ছোট ভাই আছে, আমি তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। এরপর আমরা আমাদের একজন শিক্ষককে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ শ্রেণীর তিন জন আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসি।'
ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, 'সেনাবাহিনীর ক্যাম্প পাশে থাকায় তারা সঙ্গে সঙ্গে চলে এসেছে। এরপর সর্বোচ্চ ৫–৬ মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের টিম এসে পৌঁছায়।'