‘চারপাশে শুধু আগুন, আর ধোঁয়া দেখেছি’—মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরা শিক্ষক

মাইলস্টোন কলেজে বিমান দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তারা ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করতে দেখেছেন। তবে নিহত ও আহতদের সংখ্যা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য জানানো হয়নি।
আজ সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন কলেজের ক্যাম্পাসে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হলে ঘটনাস্থলে হাজারো মানুষের ভিড় জমে যায়। এতে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষক নুরুজ্জামান মৃধা বলেন, 'আমরা রিকশা ও ভ্যানে করে কয়েকজন দগ্ধ মানুষকে নিয়ে গেছি। তাদের কাপড় পুড়ে গিয়েছিল, শরীরে সামান্য কাপড় ঝুলে ছিল। আমি পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে লোকজনকে নিজেই হেঁটে উদ্ধারযানে উঠতে দেখেছি।'
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসহ অন্যান্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে অন্তত ১৬৪ জনকে।
এছাড়া অন্যরা উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট এবং বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উত্তরার একটি হাসপাতালে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় কলেজের আরেকজন শিক্ষক বলেন, 'ছুটির ঘণ্টা বাজার আগ মুহূর্তে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গেটের সামনে অপেক্ষা করছিল। ঠিক সেই সময় আগুন লেগে যায়।'
তিনি বলেন, 'আমরা হঠাৎ আগুন জ্বলতে আর ধোঁয়া উঠতে দেখলাম। চারপাশে শুধু আগুন। আমি প্রথমে আগুন জ্বলতে দেখি, তারপর ধোঁয়া দেখি। ছুটির ঘণ্টা বাজার সময় শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল, তখনই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার দুই হাত পুড়ে গেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মুখ ও কান ঝলসে গেছে।'
ওই শিক্ষক বলেন, 'পরে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে কাপড় ভিজিয়ে নাক ঢেকে নিই। আশেপাশের শিশুদেরও একই কাজ করতে বলি। অনেকের জামায় আগেই আগুন ধরে গিয়েছিল। আমি তাদের বলি নিচু হয়ে মুখ ঢেকে রাখো। ধোঁয়া শ্বাসনালীতে ঢুকে গেলে খুব বিপজ্জনক—এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।'
তিনি বলেন, 'আমার তিন ছাত্র আমার সঙ্গে বেরিয়ে আসে। আমি যে ওড়নাটা পরে ছিলাম, সেটা দিয়ে একজনকে পেঁচিয়ে ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আমার নিজের হাতে কিছু ছিল না। আমি নিজেও ব্যথায় কাতর ছিলাম, কিন্তু মাথা ঠান্ডা রেখে অন্যদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'উদ্ধারকর্মীরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, কিন্তু আগুন সেকেন্ডের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।'
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দগ্ধ শিক্ষার্থীদের দেখা যায়।
একজন মা আর্তনাদ করে বলেন, 'আমার ছেলে ক্লাস সিক্সে পড়ে, এখনও ক্যাম্পাসের ভেতরে... জানি না ও কেমন আছে।'
মাইলস্টোন কলেজের মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নাইমুল হাসান আদিত বলেন, 'প্রথমে বিমানটি বিল্ডিং-৭-এ ধাক্কা খায়, এরপর প্রায় ১০০-১৫০ মিটার দূরে প্রাইমারি স্কুল বিল্ডিংয়ে বিধ্বস্ত হয়।'
এরপর সশস্ত্র বাহিনী এলাকা খালি করে উদ্ধারকাজ শুরু করে। ফলে দুর্ঘটনাস্থলে কেউ আটকে পড়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি।
আজ দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়নের পর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর (বিএএফ) একটি এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হলে আগুন ধরে যায়। এতে একজনের পুড়ে যাওয়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং বহু শিক্ষার্থী দগ্ধ হয়েছেন।
আইএসপিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিমানটি ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পুলিশ এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা ঘটনাস্থলে উদ্ধার ও আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।