নির্বাচন বিলম্বিত করতে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে সরকার: যুবদল

সরকার পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে, যাতে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হয় এবং সেই অজুহাতে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা যায়—এমন অভিযোগ তুলেছেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না।
শনিবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, যারা নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন চায় না, তারাই বিএনপি ও শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে সহিংসতার উসকানি দিচ্ছে। তারা চায়, দেশে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক।
মুন্নার অভিযোগ, 'আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। বারবার অনুরোধ করলেও দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।'
তিনি বলেন, 'রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী সোহাগকে প্রকাশ্য দিবালোকে অত্যন্ত নৃশংস কায়দায় নির্মমভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। মামলার এজাহারে খুনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত তিনজন খুনিকে পুলিশ কৌশলে বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। ঘটনার পর ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও, খুনিদের খুনের প্রমাণাদি হাতে থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি কেন মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেল না, এটা এক বিরাট প্রশ্ন ও রহস্য।'
দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'গত কয়েক মাসে সারাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে যখনই আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, আমরা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। গত প্রায় এক বছরে আমরা আমাদের হাজারো নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। আমরা কোথাও দায় এড়ানোর রাজনীতি করিনি। বরং দায় গ্রহণ করে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থাটুকু নিশ্চিত করেছি। কিন্তু আমরা যে হাজারো নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি, প্রশাসন কি তাদের বিষয়ে যথাযথ আইনি বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে? না নিয়ে থাকলে কেন নেয়নি?'
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে দেশে চরমভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়াচ্ছে। বিএনপি ইতোমধ্যে দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে সরকার ও প্রশাসনকে অসংখ্যবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু সরকার ও প্রশাসন এক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে ব্যর্থ হচ্ছে।
মুন্না বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া বিকল্প নেই। সরকার কার্যকর উদ্যোগ নিক, আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত। একইসঙ্গে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলছি, যাতে কেউ এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অগণতান্ত্রিক পথে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে যুবদল সভাপতি বলেন, 'পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই ঘটনার কোনো মিল নেই। গতকাল খুলনায় আমাদের এক নেতাকে গুলি ও রগ কেটে হত্যা করা হয়েছে, চাঁদপুরে এক ইমামকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে। এই ঘটনাগুলো আড়াল করতেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।'
সংবাদ সম্মেলনে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির এবং যুবদলের গিয়াসউদ্দিন মামুন উপস্থিত ছিলেন।