ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপন করতে দেব না: মামুনুল হক

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সেক্রেটারি আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, এই কার্যালয় ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না।
শুক্রবার (১১ জুলাই) হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে বাইতুল মোকাররমের উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মামুনুল হক বলেন, 'জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর যে দায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের পরিবর্তে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে যা জনআকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ও স্বাধীনতার মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত ১৬ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম ও খুনের বিচার নিশ্চিত না করে এখন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য দরজা খুলে দেওয়া মানে অপরাধীদের দায়মুক্তি ও জনগণের প্রতি অবিচার।'
তিনি আরও বলেন, 'ড. ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলি— আমরা আপনাদেরকে সহযোগিতা করেছি ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে। শহীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত এই সরকারকে জনগণের মতামত উপেক্ষা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার দেওয়া হয়নি। জাতিসংঘের তথাকথিত মানবাধিকার বাস্তবে ইসলাম ও মানবতার পরিপন্থী পশ্চিমা আদর্শের হাতিয়ার। খাল কেটে কুমির আনার অধিকার সরকারকে কেউ দেয়নি।'
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আজ আমরা শুধু প্রাথমিক প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু সরকার যদি এই সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে না আসে, তাহলে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সারা দেশে তীব্র আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবে।'
সমাবেশে বক্তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের আঞ্চলিক কার্যালয় ঢাকায় স্থাপনের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে একে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ ও জাতীয় সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।
হেফাজতের মতে, জাতিসংঘ বা কোনো বিদেশি সংস্থার মাধ্যমে মানবাধিকার ইস্যুতে হস্তক্ষেপ দেশের সংবিধান ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী। এ ধরনের কার্যালয় স্থাপন সরকারের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতার প্রতিফলন। সংগঠনটির দাবি, এটি দেশীয় ইসলামী মূল্যবোধ, সামাজিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
সমাবেশে তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করে:
১. ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
২. দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় স্বাধীন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে।
৩. বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম-খুনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ বরদাশত করা হবে না। 'ঈমানি দায়িত্ব ও জাতীয় কর্তব্য' থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলবে হেফাজত এবং প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচিরও ঘোষণা দেওয়া হবে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, নায়েবে আমীর মাওলানা মুহিউদ্দীন রাব্বানী, মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা জালালুদ্দীন, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, মুফতী মুনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা আজহারুল ইসলাম, মাওলানা রাশেদ বিন নূর, মাওলানা এনামুল হক মুসা, মুফতী শরীফুল্লাহ, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা এহসানুল হক, মাওলানা ইমরানুল বারী সিরাজী, মাওলানা জোবায়ের রশীদ ও মাওলানা এহতেশামুল হক সাকী প্রমুখ।