এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ৫৩ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা ও সত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ৫৩ ব্যাংকের হিসেব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব ব্যাংকের হিসাবে ১১৩ কোটি ৯ লাখ ৮২ হাজার ৮৬৮ টাকা রয়েছে।
বুধবার (৯ জুলাই) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদকের পক্ষে উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক তাদের ব্যাংকের হিসাব অবরুদ্ধ চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, অভিযোগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সত্তা ও সত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, মোহাম্মদ সাইফুল আলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ক) ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি খ) মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি গ) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি- এর বিভিন্ন শাখার বিভিন্ন হিসাবের অর্থ অন্যত্র হস্থান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন।
অনুসন্ধান নিষ্পত্তির পূর্বে সম্পদ হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে পরবর্তীতে এই টাকা উদ্ধারকরণ দুরূহ হয়ে পরবে। এজন্য মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ১০ ও ১৪ ধারা ও দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালা, ২০০৭ এর ১৮ ধারার বিধান মতে ব্যাংক হিসাব সমূহ অবরুদ্ধ করা একান্ত প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন সাইপ্রাসের লিমাসল জেলায় অবস্থিত সাইফুল আলমের (এস আলম) একটি দুইতলা বাড়ি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে হ্যাজেক ইন্টারন্যাশনাল পিটিই লিমিটেডে তাদের বিনিয়োগকৃত ৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংসসহ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসে আরও ১৮টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া, জার্সি ট্রাস্ট কোম্পানির অধীনে ছয়টি ট্রাস্টে থাকা বিভিন্ন অঙ্কের বিনিয়োগও জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।
তার আগে গত ২৩ এপ্রিল তার ৪০৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৫৯ একর জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ১৭ এপ্রিল এস আলমের এক হাজার ৩৬০ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত।
এসব হিসাবে দুই হাজার ৬১৯ কোটি সাত লাখ ১৬ হাজার টাকা রয়েছে। গত ১০ মার্চ এস আলমের এক হাজার ছয় বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। গত ৯ এপ্রিল তার ৯০ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। একইদিন আদালত তার ঘনিষ্ঠজনদের নামে থাকা ৩৭৪ টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের আট হাজার ১৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন আদালত। গত ৩ ফেব্রুয়ারি ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার পাঁচশো টাকা মূল্যের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪ টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন একই আদালত।
গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।