বরিশালে টানা বৃষ্টিতে ৩ নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ

টানা বৃষ্টি ও উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন এলাকায় লঘুচাপের প্রভাবে বরিশাল বিভাগের তিনটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া বড় নদীগুলোতেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার দেখা দিয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি আরও দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে।
বুধবার (৯ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আনিসুর রহমান বলেন, "মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে একদিনে বরিশালে ১৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এই বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টি আরও এক-দুই দিন থাকতে পারে।"
তিনি জানান, সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপরে, ভোলার তজুমদ্দিনে সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ৬২ সেন্টিমিটার ওপরে এবং পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পায়রা নদীর পানি ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি গেজ স্টেশনের মধ্যে ৩টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বাকি ১৬টি পয়েন্টেও পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় রয়েছে।
টানা বৃষ্টির কারণে উপকূলীয় এলাকায় বসতবাড়ি ও ফসলের জমিতে পানি ঢুকে পড়ছে। পানি না নামলে নদীভাঙনের আশঙ্কাও রয়েছে। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পানি বৃদ্ধি বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না। বর্ষাকালে দক্ষিণাঞ্চলে এটি স্বাভাবিক দৃশ্য।
বরিশাল শহর ও আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সড়ক, গলি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা পানিতে ডুবে গেছে, ফলে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সাগরদি এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান বলেন, "বৃষ্টিতে চলাচলে সমস্যা হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের স্কুলে দেওয়া যাচ্ছে না। রাস্তায় খানাখন্দ থাকায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।"
রিকশাচালক বেল্লাল মিয়া বলেন, "চার-পাঁচ দিন ধরে ঠিকমতো যাত্রী পাচ্ছি না। সারাদিন বৃষ্টি থাকায় মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না।"
কর্ণকাঠি এলাকার চাঁন মিয়া বলেন, "আমার বাড়ি কীর্তনখোলা নদীর পাশে। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে উঠান আর রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। আরও বৃষ্টি হলে ঘর ছাড়তে হতে পারে।"
কলেজ রোড এলাকার আল আমিন বলেন, "প্রতিটি গলি পানিতে ডুবে গেছে। সিটি করপোরেশন শুধু বড় ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে, অলি-গলির ড্রেনগুলো অবহেলিত। তাই বৃষ্টি হলেই পানিবন্দী হয়ে পড়ি।"
পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা বাবুল হাওলাদার বলেন, "বৃষ্টি হয়তো এক সপ্তাহ চলবে, কিন্তু পানিবন্দী অবস্থায় থাকতে হবে দুই মাস। এলাকায় ড্রেন-নালা না থাকায় পানি নামতে পারে না।"
বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা ইউসুফ আলী বলেন, "ড্রেন থেকে পানি নদীতে নামতে না পারায় উল্টো নদী থেকে পানি শহরে ঢুকছে। এ কারণে সাময়িক জলাবদ্ধতা হচ্ছে। প্রতিদিন পাঁচটি টিমে ১০০ কর্মী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো পরিষ্কারে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাটারখাল, জেলখাল, লাকুটিয়া খাল ও কুদঘাটা খাল পরিষ্কার করা হয়েছে।"
উপকূলীয় উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর বাসিন্দারা জানান, নদীর পানি বসতিতে ঢুকে পড়েছে, বিশেষ করে ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুর জেলায়।