টানা বৃষ্টিতে ভোলার ১০ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ, দক্ষিণাঞ্চলে জনদুর্ভোগ

টানা বৃষ্টিপাতে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোলা জেলার ১০টি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এর মধ্যে ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট রুটটি টানা চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় ভোলা নদীবন্দর কর্মকর্তা রিয়াদ হোসেন জানান, সমুদ্রে তিন নম্বর সতর্কসংকেত এবং নদী বন্দরে এক নম্বর সংকেত থাকলেও ভোলার কয়েকটি রুটে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই এসব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, 'ভোলার অভ্যন্তরীণ ১০টি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে দৌলতখান-আলেকজান্ডার-মির্জাকালু, বেতুয়া-ঢাকা, হাতিয়া-মনপুরা, চরফ্যাশন-মনপুরা, চরফ্যাশন-হাতিয়া, মনপুরা-ঢাকা ও তজুমদ্দিন-ঢাকা রুট উল্লেখযোগ্য। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে এসব রুটে লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে না।'
তবে ভোলা-ঢাকা রুটে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট রুট বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন ভোলা সদর উপজেলার ভেলুমিয়ার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'চারদিন ধরে মেয়ের বাড়ি লক্ষ্মীপুর যেতে পারছি না। জরুরি কাজ থাকলেও আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে যাওয়া সম্ভব না।'
চরফ্যাশনের ঢালচর ইউনিয়নের বাসিন্দা মুসলিম মিজি বলেন, 'বৈরী আবহাওয়ার কারণে ট্রলার চলাচল বন্ধ। ঢালচরের মানুষ প্রয়োজনেও কোথাও যেতে পারছে না। ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার হলেও যেতে পারছে না। খুব অসহায় অবস্থায় আছি।'
আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল বলেন, 'মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় দক্ষিণাঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী দুই-তিনদিন এভাবে বৃষ্টি চলতে পারে। সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর এবং নদী বন্দরে এক নম্বর সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।'
তবে বরিশাল থেকে ঢাকা বা ভোলা রুটে লঞ্চ চলাচলে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা শেখ সেলিম রেজা। তিনি বলেন, 'নদী বন্দরে এক নম্বর সংকেত থাকলেও বরিশালের কোনো রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়নি। সব রুটেই চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।'
এদিকে, টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অফিসগামী, শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে এই বৃষ্টিতে খুশি চাষীরা। তারা বলছেন, সময়মতো বৃষ্টিপাত মাটিকে উর্বর করবে, ধানের বীজ বপনের জন্য এটি উপযোগী সময়।
বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, ড্রেন, নালা ও ডোবায় পানি জমে গেছে। মৃতপ্রায় খালগুলোতে পানি আটকে ময়লা-আবর্জনা উপচে পড়েছে রাস্তায়। অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
রূপাতলী হাউজিংয়ের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন বলেন, 'সারাক্ষণ বৃষ্টির কারণে বাইরে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাটে চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে গেছে। ড্রেনের ময়লা রাস্তায় উঠে চলাচলে সমস্যা তৈরি করেছে। রূপাতলী বাজারের মুখ এবং গোল চত্বরের পূর্ব পাশে পানি জমেছে।'
সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম বলেন, 'প্রতিটি গলিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। সারা বছর ড্রেন পরিষ্কার করা হয়নি, কেবল বড় কয়েকটি ড্রেন পরিষ্কার করা হয়েছে। তাতে পুরো শহরের সমস্যা মেটে না। ঘিঞ্জি এলাকাগুলোতে গুরুত্ব না দিলে ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে।'
তবে কৃষকেরা মনে করছেন, এই বৃষ্টি চাষাবাদের জন্য আশীর্বাদ। বাবুগঞ্জ উপজেলার বাহেরচরের বাসিন্দা সোহরাফ হোসেন বলেন, 'ধানের বীজতলার জন্য এই বৃষ্টি খুব উপকারী। এতে ক্ষেত নরম হয়ে যাবে, চাষাবাদে সুবিধা হবে। মাটির উর্বরতাও বাড়বে।'