সিলেটে পর্যটকবাহী ৫ গাড়িতে পাথর শ্রমিকদের হামলা-ভাঙচুর, আটক ২

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে পর্যটকবাহী পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে পাথর শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (১ জুলাই) দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার থানাবাজার এলাকায় সিলেট–কোম্পানীগঞ্জ–ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ হামলায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, 'সিলেট জেলা পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ' এর ব্যানারে কোয়ারি চালুর দাবিতে মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জে গণ-অনশন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। দুপুর ১২টায় উপজেলা পরিষদের সামনে বালু ও পাথর শ্রমিকদের নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়।
পরে বেলা ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সিলেট–কোম্পানীগঞ্জ–টুকেরবাজার সড়কে যান। তাদের হাতে ছিল লাঠি-সোঁটা, বাঁশসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র। তারা সড়ক অবরোধ করে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা সড়কে চলাচলরত একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার ও দুটি সিএনজি অটোরিকশায় ভাঙচুর চালান।
এ সময় হামলাকারীদের তাড়ায় আরও কয়েকটি গাড়ি দ্রুত ঘুরিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টা সড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
ঘটনার পর কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুজনকে আটক করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে সেনাবাহিনীর দুটি প্লাটুন এবং থানা পুলিশের একটি দল মোতায়েন করা হয়।
হামলার পরপরই আমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ করেন, তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। পথে তার প্রাইভেটকারে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কাচ ভাঙচুরসহ পুরো গাড়িটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। ভাঙা কাচ গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীদের শরীরেও বিদ্ধ হয়।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান বলেন, দুপুর সোয়া ২টার দিকে একটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় কোনো মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৪ জুন প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং পরিদর্শনে যান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
সেদিন দুই উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে পাথর ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পরিদর্শন শেষে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে জাফলংসহ সিলেটের কোনো পাথর কোয়ারি আর ইজারা দেওয়া হবে না। অন্যদিকে অবৈধ পাথর ব্যবসা বন্ধে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সিলেটের বিভিন্ন স্থানে থাকা পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
দুই উপদেষ্টার নির্দেশনার পর ১৬ জুন থেকে পাথর ভাঙার যন্ত্রের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের কাজ শুরু করে প্রশাসন।