সংবিধানে থাকলেও বন ধ্বংসের হিসাব দিতে ব্যর্থ সরকার: পরিবেশ বিশেষজ্ঞ

সংবিধানে বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও প্রকল্প পরিকল্পনার সময় ভূমি ব্যবহার ও বন ধ্বংসের যথাযথ মূল্যায়ন করতে সরকার বারবার ব্যর্থ হয়েছে বলে আজ (২৩ জুন) অনুষ্ঠিত একটি কর্মশালায় পরিবেশ ও আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।
'কোস্টাল ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট ফর ইকোসিস্টেম রিস্টোরেশন অ্যান্ড স্প্যাশিয়াল ডিসিশন সাপোর্ট সিস্টেম (এসডিএসএস) টুলকিট' শীর্ষক এই কর্মশালার আয়োজন করে বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিইএলএ)। এতে সহায়তা করে অক্সফাম বাংলাদেশ, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস)। অনুষ্ঠানটি ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বিইএলএ-র প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, 'সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা বলা হলেও প্রকল্প পরিকল্পনার সময় সরকার ভূমি ব্যবহার ও বন ধ্বংসের বিষয়গুলো মূল্যায়ন করে না।'
কক্সবাজারে রেলপথ নির্মাণের জন্য ৭ লাখ ২০ হাজার গাছ এবং ২৬টি পাহাড় ধ্বংসের ঘটনা উল্লেখ করে তাসলিমা ইসলাম এটিকে সরকারের অবহেলার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
তিনি পুরনো আইনগত কাঠামোরও সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, '১৯২৭ সালের বন আইন "বন" শব্দটির সুস্পষ্ট সংজ্ঞা দেয় না, এবং বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করে না। ২০০৪ সালের সামাজিক বনায়ন বিধিমালা এবং ২০১০ সালের সংশোধনীতে সহ-ব্যবস্থাপনার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কার্যকরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে না।'
এই সমস্যাগুলোর সমাধানে তাসলিমা ইসলাম যে কয়েকটি জরুরি সংস্কারের প্রস্তাব দেন, তার মধ্যে রয়েছে—বন আইনকে অন্যান্য বিরোধপূর্ণ আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, ২০১৪ সালের বন নীতি সংশোধন, বন প্রশাসনের কাঠামো পুনর্গঠন, বন ধ্বংসের জন্য কঠোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং উপকূলীয় বন সংরক্ষণের জন্য একটি পৃথক নীতি প্রণয়ন।
বেলা সরকারের বিদ্যমান বননীতি পর্যালোচনা করে একটি নীতিগত সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন (Policy Brief) প্রস্তুত করেছে, যার লক্ষ্য আইনি কাঠামোর সংস্কার এবং দেশের বন আচ্ছাদন পুনরুদ্ধারে টেকসই বন ব্যবস্থাপনা প্রচার করা।
মূল প্রবন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ বলেন, 'এসডিএসএস টুলটি বন ব্যবস্থাপনাকে একটি নতুন এবং আরও নিখুঁত স্তরে নিয়ে যেতে পারে। তবে এই টুলে আইনি সংস্কার যুক্ত করাও অত্যন্ত জরুরি। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার সংশোধন দরকার।'
অক্সফ্যাম বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল বলেন, "উপকূলীয় বন উজাড়ের প্রধান কারণ হচ্ছে মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ যেমন অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটা, চিংড়ি চাষ ইত্যাদি। এর ফলে প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে যাচ্ছে। কৌশলগত অংশীদারিত্ব ও সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ধ্বংস প্রতিরোধ করা সম্ভব।'
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, "সহ-ব্যবস্থাপনায় বনবাসীদের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে, অথচ বহু বছর ধরে প্রজেক্ট চলছে।"
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আখতার হোসাইন বলেন, "কোথায় গ্যাপ রয়েছে, তা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।"