শেখ হাসিনার পক্ষে সরকারি খরচে ‘ডিফেন্স লইয়ার’ নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলায় ক্ষতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাকিল আকন্দ বুলবুলের পক্ষে সরকারি খরচে নিয়োগ পাওয়া ডিফেন্স লইয়ার অ্যাডভোকেট আমিনুল গণি টিটোর নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও আইনাঙ্গনে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু লেখেন, 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসকারী, খুনি, মিথ্যেবাদী শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই।'
এছাড়াও আরও নানা পোস্ট দেন এই আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীকেই শেখ হাসিনার পক্ষে গত ১৯ জুন স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল নিযুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস) বলেন, যে আইনজীবী একজন ব্যক্তির বিপক্ষে নানাভাবে সরব এবং সামাজিক মাধ্যমে তার ফাঁসি চেয়ে পোস্ট দেন, তিনি কীভাবে আবার সেই ব্যক্তির পক্ষে আদালতে লড়বেন, এটি নৈতিকতার প্রশ্ন। এটি আসলে কোনোভাবেই হতে পারে না।
তিনি বলেন, স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে হলে, কোনো মক্কেলের পক্ষে স্বচ্ছ ইমেজের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়াই হলো যৌক্তিক।
'২২৬ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি'- অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিওর বক্তব্য শেখ হাসিনার উল্লেখ করে তিনিসহ দুজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম।
এরপর গত ৩০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত শুনানিতে দুই আসামিকে ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। ধার্য তারিখে তারা হাজির হননি এবং আইনজীবীর মাধ্যমেও ব্যাখ্যা দেননি।
সেদিন ট্রাইব্যুনাল দুই আসামিকে সশরীর হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দেওয়ার জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দেন। পরদিন দুটি সংবাদপত্রে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে দুজনকে ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অভিযোগের বিষয়ে জবাব দিতে বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে গত ১৯ জুন এই মামলায় শেখ হাসিনো ও অপর আসামিকে পলাতক ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
একইসঙ্গে পলাতক এই দুইজনের পক্ষে সরকারি খরচে আইনজীবী আমিনুল গণি টিটুকে ডিফেন্স লয়ার, বা পলাতক আসামি পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
আগামী ২৫ জুন এই মামলায় অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি দিন ধার্য রয়েছে।
শেখ হাসিনার ফাঁসি চাওয়া আইনজীবী আমিনুল গনি টিটু স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর গণমাধ্যমকে বলেন, 'বিচারাধীন একটি বিষয় নিয়ে আমি বেশি কথা বলব না। শুধু বলব, আমি আমার মক্কেলের পক্ষে দাঁড়াব। এখানে পারসন প্রধান বিষয় নয়। প্রধান বিষয় হচ্ছে ক্লায়েন্ট।'
তিনি বলেন, 'আমাকে রাষ্ট্রপক্ষে তার জন্য স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি দেখব আমার ক্লায়েন্ট আইনগত সর্বোচ্চ কী সুবিধা পেতে পারেন।'
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার এক মামলায় গত ১৯ জুন ট্রাইব্যুনাল তার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল ছাড়াও একজন অ্যামিকাস কিউরিকে (আদালতে বন্ধু) নিয়োগ দেওয়া হয়।
নিয়োগ পাওয়া অ্যামিকাস কিউরি হলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান।
শেখ হাসিনার পক্ষে সরকারি খরচে নিয়োগ পাওয়া ডিফেন্স আইনজীবী আমিনুল গণি টিটুর বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তিনি বলেন, 'এটি ট্রাইব্যুনাল নিয়োগ দিয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য করার এখতিয়ার আমার নেই।'
এদিকে, শেখ হাসিনার ফাঁসি চেয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রায় সাড়ে ১০ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে অনেকে সেই পেস্টে কমেন্ট করছেন। গত বৃহস্পতিবার তাকে শেখ হাসিনার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়ার পর দেলোয়ার হোসেন নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে কমেন্টের ঘরে লেখা হয়, 'স্যার আপনি নাকি শেখ হাসিনার পক্ষের আইনজীবী? এখন কী করবেন তাহলে?'
নিজাম উদ্দিন খান জাহিন নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, 'ওরে, ইনি আবার হাসিনার আইনজীবী?'
মো. ইমরান মনির নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে কমেন্ট করা হয়েছে, 'এই হচ্ছে পক্ষের আইনজীবীর অবস্থা।'