তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন হতে হবে: জামায়াতের নায়েবে আমির

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী'র নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের চতুর্থ দিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা এক্সটেন্ডেন্ড ইলেকটোরাল কলেজের পক্ষে তবে লোকাল গভর্নমেন্ট এর নির্বাচন হতে হবে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট এর অধীনে। কেউ কেউ ইউনিয়ন পরিষদ আবার কেউ জেলা পরিষদ পর্যন্ত ভোটার নিতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে আমরা ফ্লেক্সিবল।'
কমিশন বর্তমানে রাজনৈতিক সংস্কারের সম্ভাব্য দিক নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। আজকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল রাষ্ট্রের মূলনীতি ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সংক্রান্ত আলোচনা।
দুপুরের খাবারের বিরতিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, 'বিদ্যমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি সিম্বলিক জায়গায় থাকে। এখন সবাই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য দেখতে চাই। সবাই বিদ্যমান পদ্ধতির পরিবর্তন চাই কিন্তু নতুন ব্যবস্থা নিয়ে সবার ভিন্নমত আছে।'
তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সব রাজনৈতিক দল একমত হলেও, নতুন কাঠামো কেমন হবে—সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে।'
আজকের আলোচনা প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, 'আজকের আলোচ্যসূচি এখনো এগোয়নি। আলোচনাগুলো এখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও তার ক্ষমতা নিয়েই ঘুরপাক খাচ্ছে, যেমনটা গতকাল ছিল।'
তিনি বলেন, 'আমরা যে একটি বড় পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছি, তা হলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হাত তুলে ভোট দেওয়ার প্রচলিত পদ্ধতির পরিবর্তে গোপন ব্যালট প্রবর্তন। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ব্যাপ্তি নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে আমরা একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব বলে আশাবাদী।'
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, অধিকাংশ দলই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বর্তমান পদ্ধতির পরিবর্তনের পক্ষে।
তিনি বলেন, 'এ উদ্দেশ্যে একটি ইলেক্টোরাল কলেজ গঠনের প্রস্তাব এসেছে। আমাদের অবস্থান হলো—এই কলেজে জেলা ও সিটি করপোরেশন এবং সংসদের দুই কক্ষের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন, এবং ভোট হবে গোপন ব্যালটে।'
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়াটি রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার পরিসরের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত।
তিনি বলেন, 'রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়াতে হবে।'
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর ৫৭৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি ইলেক্টোরাল কলেজ গঠনের প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, 'এতে দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থেকে ৫০০ সদস্য এবং জেলা ও সিটি করপোরেশন থেকে ৭৬ জন প্রতিনিধি থাকবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'জাতীয় ঐকমত্যের স্বার্থে আমরা আমাদের অবস্থানে নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত।'
আজকের আলোচনা সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় এবং তা গতকালের অসমাপ্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত আলোচনার ধারাবাহিকতা।
সূত্র মতে, আলোচনা শেষে কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী রিয়াজ সাংবাদিকদের ব্রিফ করবেন, এরপর অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হবেন।