আসিফ কী বললেন তাতে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই, তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছি: ইশরাক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর বিষয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কী বললেন তাতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ইশরাক। বরং তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানান তিনি।
বুধবার (১৮ জুন) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের (টিবিএস)- সঙ্গে আলাপকালে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন এসব কথা বলেন।
আজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে প্রশ্নোত্তরে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে আমাদের শপথ দেওয়ার সুযোগ নেই।'
এ বিষয়ে টিবিএস ইশরাক হোসেনের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আসিফ মাহমুদ একেক সময় একেক বক্তব্য দিচ্ছেন। এর আগেও ১০ টি কারণ দেখিয়েছেন। এই ধরনের ভাওতাবাজি জনগণ বুঝে গেছে, এই ধরনের ভাওতাবাজিতে জনগণ আর বিশ্বাস করে না।'
তিনি বলেন, 'আমরা যেটা বলে আসছি খুব ভালোভাবেই বুঝেই রাজনৈতিকভাবে তারা এই সিদ্ধান্তটি নিয়েছে। এখন তারা বিভিন্ন কারণ, বিভিন্ন অজুহাত দেওয়ার চেষ্টা করছে।'
ইশরাক হোসেন বলেন, 'বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের রায়েই তো ওটা [সিদ্ধান্ত] খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপরে এই বিষয়ে আইনি কোনো প্রশ্ন, মেয়াদ এই ধরনের কোনো যুক্তি কিছুই আর চলে না।'
তিনি বলেন, 'তারা [আসিফরা] যেহেতু ইনএক্সপেরিয়েন্সড, তাই এসব কথা বলছে। যদি একটু এক্সপেরিয়েন্সড হতো, শিক্ষাদীক্ষার দিক থেকে একটু উন্নত হতো, তাহলে নতুন কিছু বের করত। যেটা মানুষকে বিশ্বাস করলেও করতে পারত। এ ধরনের পুরোনো ভাঙা রেকর্ড আসলে কেউ বিশ্বাস করে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমি মনে করি এই বিষয়ে আসিফ মাহমুদ কী বলল তাতে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই। কারণ তাকে তো আমরা মানি না। এলজিআরডি উপদেষ্টা হিসেবে দলীয়ভাবে তার পদত্যাগ আগেই চাওয়া হয়েছে এবং আমরা সেই দাবিতে এখনও অটল আছি।'
ইশরাক বলেন, 'আসিফ অবৈধভাবে তার ক্ষমতাকে ব্যবহার করে উত্তরে একটি চিঠি লিখে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি নানা ধরনের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই সরকার যখন শপথ নেয় তখন সেই অনুষ্ঠানে আমিও ছিলাম। তখন আমাদের সমর্থন ছিল। এখন আমাদেরদের তার প্রতি সমর্থন নেই।'
তিনি বলেন, 'আমি মূলত মনে করি তিনি এখন ওই পদে বসে আছেন, এটাই অবৈধ। কারণ তিনি তো সরাসরি হাইকোর্টকে অবমাননা করছেন। বাংলাদেশ সরকারে থাকতে হলে যে আচরণবিধি মানতে হয় সেটাকে তিনি ভঙ্গ করছেন এবং বাংলাদেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'এইসব কারণে তার বিরুদ্ধে আমাদের আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো এখন কোনো রেজাল্ট পাব না, বাট আমরা হয়তো এটা [আইনি পদক্ষেপ] নেব। আর তিনি এখন উপদেষ্টা, তাই তিনি কী মন্তব্য করলেন এটা এখন মিডিয়ার কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে। আমরা আসলে তিনি কী বলছেন সে বিষয়ে কোনো খোঁজখবর নেই না।'
ইশরাক বলেন, 'আমাদের কার্যক্রম তো চলমান আছে। এতে তো পরিবর্তন আসেনি। এতে যখন যেভাবে পরিবর্তন আসছে, তা আমরা ডিক্লেয়ার দিচ্ছি।'
তিনি বলেন, 'আমাদের যে মূল দাবি এবং যে আন্দোলন; সেটা থেকে তো আমরা সরে আসিনি। এই বিষয়টা তেমনই আছে।'
তাদের কার্যক্রমে দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, 'আমরা তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা পাচ্ছি। কারণ তাদের মেয়র হিসেবে তারা আমাকে মেনে নিচ্ছেন এবং তারাই তো এই আন্দোলনটা করছেন। আন্দোলনটা কিন্তু কোনো দলীয়ভাবে আমরা অর্গানাইজ করিনি। সাধারণ জনগণ যারা ভোটার এবং শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন তাদের মাধ্যমে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মচারী-কর্মকর্তারা এই আন্দোলনে পার্টিসিপেট করছেন। আমরা কিন্তু তাদেরকে গিয়ে জোর করি নাই।'
ইশরাক বলেন, 'আমরা বিভিন্ন সেবাগুলো দ্রুত চালু করার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা লক্ষ্য করছি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ওই উপদেষ্টা বা তার নিচের প্রশাসকদের দিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তাদেরকে একপ্রকার বাধা দিচ্ছে। এরকম অনেকগুলো ঘটনা আমরা শুনতে পাচ্ছি যে, জন্ম নিবন্ধন বা মৃত্যু সনদে যাতে তারা (আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা) সাইন না করে। তারা চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে।'
তিনি বলেন, 'এছাড়া জ্বালানি বন্ধ করে দেওয়ার জন্যে এই ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আন্দোলনকারী, আমরা উল্টা সার্ভিস চালু করতে চাচ্ছি। অথচ তারা এটাকে [সেবা] ব্যাহত করতে চাচ্ছে। যাতে তারা এটা করে জনগণকে খেপিয়ে তুলে আমাদের ওপর দায় চাপাতে পারে। তবে আমরা এই বিষয়ে সজাগ আছি।'