চাহিদা কমায় রাজশাহীর আমের বাজারে মন্দা, ঈদের ছুটির পর ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ব্যবসায়ীদের

ঈদের দীর্ঘ ছুটির প্রভাব পড়েছে রাজশাহীর আমের বাজারে। আমচাষি, ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দাবি—ঈদ ঘিরে ভোক্তাদের আম কেনার আগ্রহ কমে গেছে, সঙ্গে কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় পরিবহনেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। ফলে গাছ থেকে আমও কম পাড়া হচ্ছে। তবে ঈদের পরদিন থেকেই বাজারে বেচাকেনা জমে উঠবে এবং দাম ভালো মিলবে—এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, গোপালভোগ আম বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ ২৪০০ টাকায়। এছাড়া ল্যাংড়া ১৬০০, আম্রপালি ১৮০০ থেকে ২২০০, খিরসাপাত বা হিমসাগর ১৮০০ থেকে ২২০০ এবং লক্ষণভোগ আম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চাষি ও ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, এদিন বাজারে আমের আমদানি কম থাকায় দাম ভালো পাওয়া গেছে। তবে এর আগের দিন বুধবার আমের সরবরাহ বেশি থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় প্রতি মণে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত কম দামে আম বিক্রি করতে হয়েছে।
সাধারণত হাটে আমের দাম নির্ভর করে দূরদূরান্ত থেকে আগত ক্রেতা এবং বিক্রেতার ওপর ভিত্তি করে। সেক্ষেত্রে আমের দাম কম-বেশি হয়। আমদানি বেশি হলে এবং ক্রেতা কম হলে দাম কম হয়। আবার ভালো জাত, গ্রেড ও মান এবং আকৃতির ওপরও দাম নির্ভর করে। একই জাতের আম আকৃতি এবং পরিপক্কতার ওপর ভিত্তি করে মণে কয়েকশো টাকা পর্যন্ত কম-বেশি হতে পারে।
কাটাখালীর ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক জানান, বৃহস্পতিবার তিনি গুটি আম ১২০০, ল্যাংড়া ১৬০০ এবং লক্ষণভোগ ৯০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। আম কম থাকায় চাহিদা বেশি থাকায় ভালো দাম পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। তবে বুধবারের তুলনায় দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি।
একইভাবে সোহেল রানা নামের এক চাষী জানান, তিনি ১৬ ক্যারেট (প্রায় ৪০০ কেজি) ল্যাংড়া ২১০০ টাকায় এবং রাণী পছন্দ ১৪০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় শুক্রবার আম পাড়ছেন না। ঈদের পর বাজার জমে উঠবে বলে তার আশা।
বানেশ্বর হাটের ইজারাদার জাকির হোসেন সরকার রাসেল জানান, বৃহস্পতিবার থেকে হাটে ঈদের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। হাটে আম আমদানি কম হচ্ছে। ক্রেতা কম থাকায় চাষীরা আম ভাঙছে না। মানুষজন এখন ঘরমুখী। ঈদের দিন ও ঈদের পরের দিন হাট বন্ধ থাকবে। তবে ঈদের একদিন পর থেকে আবার কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠবে।
রাজশাহী শহরেও বসেছে অস্থায়ী আমের বাজার। খুচরা বাজারে গোপালভোগ ও খিরসাপাত ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, অর্থাৎ মণে ২৪০০ থেকে ২৮০০ টাকা। তবে কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ থাকায় আম পাঠানোয় সমস্যা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
'বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ'-এর আয়নাল হক পিটার বলেন, প্রতিদিন যেখানে ১০০ থেকে ১৫০ মণ আম গাছ থেকে পাড়া হতো, এখন তা কমে ৫ মণের নিচে নেমে এসেছে। ক্রেতা ও পরিবহন সমস্যা এ পরিস্থিতির মূল কারণ।
আম কিনতে এসেছিলেন ক্রেতা তারেক মাহমুদ। তিনি জানান, তিনি সাভারে আম পাঠাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু ঈদের কারণে তা সময়মতো পৌঁছাবে না জেনে পাঠানো থেকে বিরত থেকেছেন।
রাজশাহীর ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সুজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ঈদের সময় আমের চাহিদা কমে যায়। কারণ ঢাকার মতো বড় শহরে মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় ভোক্তা কমে। আবার গাছে বেশি দিন আম রাখা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই চাষীরা এখন যতটা সম্ভব গাছে রেখে দিচ্ছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এ থেকে প্রায় ১ লাখ ৬৯৬ কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।