এক যুগের ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে দ্বিগুণ

বাংলাদেশে বিগত এক দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। নতুন আইন প্রণয়ন করেও সড়কে শৃঙ্খলা ফিরানো যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সড়ক পরিবহণ আইন ও বিধিমালায় একাধিক অস্পষ্টতা থাকায় মাঠ পর্যায়ে বিদ্যমান আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের ডাটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিগত এক দশকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় দেশজুড়ে মৃত্যু হয়েছিল ২ হাজার ৫৩৮ জনের। ৯ বছরের ব্যবধানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮৪-তে। ২০২৩ সালে সারাদেশে ৫ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান ৫ হাজার ৩০৫ জন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে ৫ হাজার ৮৫৬টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৪৭৯ জনের। আর ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ জনের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 'সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮' এবং এই আইনের অধীনে 'সড়ক পরিবহণ বিধিমালা, ২০২২' সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে যথেষ্ট নয়। অনেক বিধান শুধু নীতিগতভাবে উল্লেখ থাকলেও, তার বাস্তবায়ন কৌশল বা গাইডলাইন পরিষ্কার নয়।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ পরিচালিত রোড সেফটি ইনজুরি অ্যান্ড প্রিভেনশন প্রোগ্রামের আওতায় রোডক্রাশের কারণ ও এর প্রতিকার নিয়ে কাজ করেছে। প্রজেক্টের উপদেষ্টা ও নিটোরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল আউয়াল রিজভী বলেন, "বিদ্যমান আইনে বিআরটিএ-কে গতিসীমা নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হলেও কীভাবে সেই সীমা পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগ হবে, তা স্পষ্ট নয়। যাত্রীদের সিটবেল্ট পরার কথা বলা হলেও, সিটবেল্টের গুণগত মান বা শিশুদের জন্য নিরাপদ আসন সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা নেই। একইভাবে হেলমেটের মান সংক্রান্ত ধারা থাকলেও কে বা কোন কর্তৃপক্ষ মান নির্ধারণ করবে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই আইনটিতে।"
পরিস্থিতি উত্তরণে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের প্রস্তাবিত 'সেফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচ' অনুসারে এখনই একটি নতুন ও আধুনিক সড়ক নিরাপত্তা আইন দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক রিজভী।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী—দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীব নিহত হন। আহত হন আরও ৯ জন শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় শুরু হয় নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন। দাবির মুখে ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে 'সড়ক পরিবহণ আইন, ২০১৮' পাস করা হয়।
পরবর্তীতে বাস্তবতা বিবেচনায় এবং বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে এই আইনে কিছু সংশোধনী আনা হয়। এতে কিছু ধারা শিথিল ও পরিমার্জিত হয়। তবে আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের পরও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরেনি।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সড়কে নিরাপত্তার জন্য যে ধরনে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটি দেখা যায় না। অনেক সময় বিদ্যমান আইনের কিছু অস্পষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন আসে। এ অবস্থায় বাস্তবায়নযোগ্য আইন প্রণয়ন দরকার বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের পরিচালক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহণ আইনের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করেছি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে নতুন আইন প্রণয়নে কাজ করছি। তাছাড়া সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম আয়োজন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।