নির্বাচন, কিছু সংস্কার, খাতভিত্তিক সংস্কারের রূপরেখা—৩ দায়িত্ব পালনে কাজ করছে সরকার: সালেহউদ্দিন

অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্ব—নির্বাচন আয়োজন, কিছু সংস্কার এবং বিভিন্ন খাতে সংস্কারের রূপরেখা প্রণয়ন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। তবে, আমরা 'ক্যাঙ্গারু কোর্টের' মতো বিচার করতে পারি না।'
তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় বাজেটের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে আনা হবে ২ জুন, যা প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট হতে যাচ্ছে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অর্থ উপদেষ্টা জানান, সরকার একটি জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এর আগে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সময় মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি, কারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছিল।
'আমরা চাই না এসব পুনরাবৃত্তি হোক। সব রাজনৈতিক দলই একটি ভালো নির্বাচন চায়। সবাই যদি গণতান্ত্রিক আচরণ করে, তাহলে দলীয় পর্যায়েও গণতন্ত্রের চর্চা জরুরি,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের মধ্যে ঐকমত্য থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। 'আমরা আশাবাদী প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নির্বাচনী ব্যবস্থা ঠিক থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।' তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
বিভিন্ন দাবিতে বিভিন্ন মহলের অবস্থান কর্মসূচি এবং আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব কর্মসূচি প্রায়ই দৈনন্দিন কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায়।
'এসব আগের সরকারে হতে পারত না, কারণ সেসব দমন করা হতো। কিন্তু এখন আমাদের জন্য ব্যাপারটা কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে,' বলেন তিনি।
এনবিআর বিভাজন নিয়ে রাজস্ব বোর্ড কর্মীদের আপত্তির মধ্যেও সরকার তার প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে আসবে না জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, কর্মীদের উত্থাপিত যৌক্তিক সমস্যাগুলো নিরসন করা হবে।
আসন্ন বাজেটে মহার্ঘ ভাতা নিয়ে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। 'ঘোষণা দিলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা তাদের পূর্ণ প্রত্যাশা অনুযায়ী কতটা দিতে পারব তা বিবেচনা করব।'
এনবিআর সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, 'একটি প্রতিষ্ঠান নীতিনির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন একসঙ্গে করতে পারে না। এ রকম আর কোথাও নেই। তাই এনবিআরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা জরুরি ছিল।'
তিনি জানান, 'আমরা এনবিআরকে বিভক্ত করেছি এবং নীতিমালা বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ গঠন করেছি, যা মূলত নীতিগতভাবে প্রয়োজন ছিল।'
দেশব্যাপী এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বর্তমানে এনবিআর বাতিলের কোনো সম্ভাবনা নেই, কারণ সংশোধনের পর 'রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫' বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময় লাগবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বর্তমানে এনবিআরের সব কার্যক্রম আগের মতোই চলবে।'
সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, নীতিমালা বিভাগটি ছোট হবে এবং সেখানে কর খাতে দক্ষ জনবলসহ অর্থনীতিবিদ, পরিসংখ্যানবিদ থাকবে, যারা দেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বিশ্লেষণ ও পূর্বাভাসের কাজ করবে।
তিনি বলেন, 'আমরা রাজস্ব ব্যবস্থার কার্যক্রম বাতিল করছি না, বরং তা 'রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ'-এর মাধ্যমে পরিচালিত হবে।'
তিনি বলেন, অধ্যাদেশটি নীতিগতভাবে জারি হয়েছে, তবে এর বিস্তারিত নির্ধারিত হয়নি। জনবল কাঠামো ও কর্মনির্দেশক এখনও নির্ধারিত হয়নি।
তিনি জানান, এনবিআর কর্মীদের জানানো হয়েছে, সবকিছু আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে এবং কাউকে অবিচার করা হবে না, বরং সবার প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, এনবিআর বিভাজনের উদ্যোগ ২০০৮ সালে নেওয়া হয়েছিল, তবে এখন এই বোর্ডটি পৃথক করতে ১৭ বছর লেগে গেছে।
তিনি আরও জানান, এনবিআর সংস্কারের জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে, তবে সরকারই ঠিক করবে কোন পরামর্শগুলো গ্রহণ করা হবে।
আইন বা অধ্যাদেশ দেশের স্বার্থেই প্রণয়ন করা হয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এনবিআর সংস্কার নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক বিশেষজ্ঞই মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন।
এনবিআর বিভাজন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তে হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইএমএফের সঙ্গে মূলত বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
'সরকার নিজেই মনে করেছে এনবিআর পৃথক করা দরকার। উন্নয়ন সহযোগী যেমন আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ ছাড়াও সরকারের নিজস্ব উপলব্ধিই এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল,' বলেন তিনি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, রাজস্ব বোর্ড বিভাজনের প্রশাসনিক কাঠামো নির্ধারণে এনবিআর ও সব গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হবে। এতে বিসিএস (কর) এবং বিসিএস (কাস্টমস ও ভ্যাট) ক্যাডারের স্বার্থ রক্ষা পাবে।