পাঁচ সীমান্ত দিয়ে ৮৮ জনকে পুশ ইন করল বিএসএফ

ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, খাগড়াছড়ি ও চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে আরও ৮৮ জনকে পুশ ইন করেছে। বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়।
সীমান্ত এলাকায় ঘুরাফেরা করতে দেখে তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বেশিরভাগই কুড়িগ্রামের বাসিন্দা এবং কাজের খোঁজে ভারতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
মৌলভীবাজারে পুশ ইন ২৯ জন
মৌলভীবাজারের জুড়ি ও কমলগঞ্জ উপজেলার তিনটি সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার সকালে নারী-পুরুষ ও শিশুসহ ২৯ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করে বিএসএফ। জুড়ির রাজকি সীমান্ত দিয়ে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ১০ জনকে এবং কমলগঞ্জের বাগিছড়া ও চাম্পাপাড়া সীমান্ত দিয়ে আরও ১৯ জনকে পুশ ইন করা হয়।
তাদের সবাই কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে বলে জানান বিজিবি ৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. জাকারিয়া। রাজকি ক্যাম্প কমান্ডার নায়েক সুবেদার আবুল হাশেম ১০ জনকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
চুনারুঘাট সীমান্তে ২২ জন
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ডেবরাবাড়ি সীমান্ত দিয়ে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিএসএফ ২২ জন বাংলাদেশিকে পুশ ইন করে। শুক্রবার সকালে বিজিবির টহল দল তাদের আটক করে। আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ৮ জন নারী ও ৫ জন শিশু রয়েছে।
তারা সবাই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এবং বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে বিজিবি। চুনারুঘাট থানায় তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বিজিবি ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানজিলুর রহমান জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, এর মাত্র তিন দিন আগে একই উপজেলার কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়েও ১৯ জনকে পুশ ইন করেছিল বিএসএফ।
ফেনীর ছাগলনাইয়ায় শিশুসহ ১৩ জন
শুক্রবার ভোরে ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন বাংলাদেশিকে পুশ ইন করে বিএসএফ। পরে সকাল ৯টার দিকে মথুয়া এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ঘরে তাদের দেখতে পায় বিজিবি। সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা পুশইনের বিষয়টি জানান। তাদের মধ্যে ৪ জন পুরুষ, ৩ জন নারী ও ৬ শিশু রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ইটভাটায় কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে তাদের চোখ ও হাত বেঁধে সীমান্ত এলাকায় এনে পরে বাঁধন খুলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। রাতের অন্ধকার ও বৈরী আবহাওয়ায় তারা পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন।
তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফেনী ৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। তিনি জানান, বিএসএফের এ ধরনের আচরণের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
খাগড়াছড়ি দিয়ে ১৪ জন
বিএসএফ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা সীমান্ত দিয়ে আরও ১৪ জন পুশ-ইন করেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা ইউএনবি।
শুক্রবার (৩০ মে) ভোর ৫টার দিকে মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের আম বাগান সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশ-ইনের পর তাদের আটক করে বিজিবি।
আটকদের ২৩ বিজিবি যামিনী পাড়া ব্যাটালিয়নের তত্ত্বাবধায়নে তাইন্দং ডিপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।
আটকরা জানান, তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ইট ভাটায় কাজ করতেন। সেখান থেকে তাদের আটক করে বিমানে করে ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় নিয়ে আসা হয়। এরপর দক্ষিণ ত্রিপুরায় নিয়ে এসে ভোরে জোরপুর্বক বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানো হয়।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এবি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানান, আটকদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই চলছে।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ১০ জন
আমাদের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। পরে বিজিবি তাদের আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ৫ শিশু ও ৫ জন নারী রয়েছেন।
বিজিবির মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবি জানায়, মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের অধীন বেনীপুর বিওপির নায়েক মো. মশিয়ার রহমানের নেতৃত্বে বিজিবি সদস্যরা আজ দুপুর ১টায় জীবননগর উপজেলার বেনীপুর সীমান্তের ৬১/১৪ নম্বর পিলার থেকে আনুমানিক ১০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। তাদের জীবননগর থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
বিজিবি আরও জানায়, গুজরাট পুলিশ তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় ২৪ মে আটক করে। ২৮ মে ট্রেনযোগে গুজরাট থেকে তাদের কলকাতায় আনা হয়। পরদিন রাতে বাস যোগে কলকাতার নোনাগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পের সামনে আনা হয়। সেখান থেকে তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।