‘ড. ইউনূসের কাছে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন’: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছিল; প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের পদত্যাগ দাবি করেনি বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। আজ (২৮ মে) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে 'তারুণ্যের সমাবেশে' তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। আমরা তার (প্রধান উপদেষ্টার) পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছি।'
সমাবেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'গণতান্ত্রিক অধিকার চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তবে আমরা সেই অপরাধ বারবার করতে থাকবো।'
নিরপেক্ষ সরকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, 'আমাদের সবার লক্ষ্য হোক সবার আগে বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন বাংলাদেশ।'
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে ঐক্য ধরে রাখার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা এমন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, যেখানে তারুণ্যের অংশগ্রহণ থাকবে। ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। সুকৌশলে ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন ও তাদের লুটপাটের কথা ভুলতে বসেছি। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।'

আওয়ামী লীগের শাসনের সঙ্গে ব্রিটিশ শাসনের তুলনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, 'ব্রিটিশ শাসনামলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ২০০ বছরে যা লুটপাট করেছে, আওয়ামী লীগ তার চেয়ে বেশি সম্পদ লুট করেছে। তারা ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। বিদ্যুৎ ও ব্যাংক খাতে লুটপাট চালিয়েছে। ব্যাংক থেকে যত টাকা লুট হয়েছে, তা দিয়ে ৩৬টি পদ্মাসেতু বানানো যেত। আমাদের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ কখনো গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী।'
তারেক রহমানের নেতৃত্বে যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছেন, তাদের 'বিভিন্ন দেশের এজেন্ট' হিসেবে আখ্যায়িত করার সমালোচনা করে সালাহউদ্দিন বলেন, 'আসলে যারা আমাদেরকে অন্তরায় মনে করে, তারা এসব বলে।'
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর তিনটি অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীতে 'তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা' শীর্ষক সমাবেশ চলছে। বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে দলের সমাবেশ শুরু হয়। এর আগে সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের স্লোগান, ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মৌচাক থেকে শান্তিনগর, কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন, মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মসজিদের সামনে দিয়ে নয়াপল্টন; পল্টন থেকে স্কাউট ভবনের সামনে হয়ে নয়াপল্টন এবং শাহজাহানপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টন পর্যন্ত সড়কজুড়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের পদচারণায় জনসমুদ্রের সৃষ্টি হয়।
অনেকের হাতে দলীয় পতাকা, ব্যানার ও ফেস্টুন দেখা গেছে। নেতা-কর্মীরা নেচে-গেয়ে, স্লোগানে স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেছেন। আয়োজন করা হয়েছে সঙ্গীতানুষ্ঠানও।
ঢাকা, ফরিদপুর, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগ জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে এ সমাবেশ আয়োজন করা হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য রাখবেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
রাজনৈতিকভাবে উদ্বুদ্ধ করতে মে মাসজুড়ে এই তিনটি অঙ্গসংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর অংশ হিসেবে চারটি বিভাগের বিভিন্ন শহরে দুইদিন করে সেমিনার ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বগুড়ায় এই ধরনের সেমিনার ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়েছে। আজ রাজধানী ঢাকায় এই কর্মসূচির চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সোমবার (২৬ তারিখ) এক সংবাদ সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি ইউএনবিকে বলেন, চট্টগ্রামে আমাদের সমাবেশে তরুণদের বিপুল সমাগম হয়েছে। খুলনা ও বগুড়ায়ও আমাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এতে আমরা সমাজের সব স্তরের তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি।
ঢাকার সমাবেশে ১৫ লাখ তরুণ অংশ নিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সেচ্ছাসেবক দলের এই শীর্ষ নেতা বলেন, সমাবেশে অংশ নিতে তরুণরা উদগ্রীব হয়ে আছে। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন এই সমাবেশ সফল করবে। সেখানে ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার-বঞ্চিত যুবকরা গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার প্রধান দাবি উত্থাপন করবে।
তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার চলমান আন্দোলনে এই সমাবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখবেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন এবং ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এছাড়া, সঞ্চালনায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।