সাম্য হত্যাকাণ্ড: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, তবে উত্তর মেলেনি অনেক প্রশ্নের

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসায়ী মেহেদীর অনুসারীদের কাছে থাকা 'টেজার গান দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে খুন হন' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। হত্যাকাণ্ডের মূলহোতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
তবে হত্যার মোটিভ, জড়িত ব্যক্তিদের সংখ্যা ও ঘটনার পেছনের অন্যান্য তথ্য জানতে চেয়ে সাংবাদিকরা যেসব প্রশ্ন করেন, তার অনেকগুলোরই উত্তর মেলেনি সংবাদ সম্মেলনে।
এদিকে পুলিশে বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সাম্যর ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কমিশনার বলেন, গত ১৩ মে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হন সাম্য। ওই ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা হয় এবং ঘটনার রাতেই তিনজনকে আহত অবস্থায় রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কক্সবাজার, মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ আরও আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদের মধ্যে রয়েছেন—রাব্বী, মেহেদী, পাপেল, রিপন, সোহাগ, রবিন, হৃদয় ও সুজন সরদার।
গ্রেপ্তারকৃত মেহেদীর দেখানো মতে, তিন নেতার মাজারের সন্নিকটে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি সুইস গিয়ার চাকু উদ্ধার করেছে ডিবি।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে দুজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।
ডিবির তথ্যমতে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনটি মাদক ব্যবসায়ী গ্রুপ সক্রিয়। একটির নেতৃত্বে রয়েছে মেহেদী।
ঘটনার দিন সাম্য ও তার দুই বন্ধু বাইকে করে উদ্যানে গেলে তারা রাব্বীর হাতে টেজার গান দেখতে পান। সাম্য সেটি দেখতে চাইলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির একপর্যায়ে সংঘর্ষ বাধে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, পরে অন্যরাও এসে ধস্তাধস্তির মধ্যে সাম্যকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এরপর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
উল্লেখ্য, টেজার গান একটি বৈদ্যুতিক অস্ত্র, যা দেখতে অনেকটা পিস্তলের মতো হলেও এর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি থেকে ছোট ধাতব সুচের মতো দুটি প্রোব বের হয়ে বৈদ্যুতিক শক দেয়, যা ব্যক্তির স্নায়ুতন্ত্রে প্রভাব ফেলে তাকে সাময়িকভাবে অচল করে ফেলে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক দেশে এটি ব্যবহার করে অপরাধীকে কাবু করার জন্য, যাতে গুলির মতো প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করতে হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, সাম্য ও তার দুই সহপাঠী খাবার খেতে উদ্যানে গিয়েছিল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনেক ফুডকার্ট থাকে এবং সেগুলোতে অনেক রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায়।
'সেখানে টেজার গানটি দেখে সাম্যের সন্দেহ হয় এবং সেটি দেখতে চাওয়াকে কেন্দ্র করেই ঘটনাটি ঘটে,' বলেন তিনি।
তবে ঘটনাস্থলের পাশে কোনো ফুডকার্ট নেই—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত এখনো চলছে এবং তাদের প্রাথমিক তথ্যে ফুডকার্ট থাকার কথা জানা গেছে।
হত্যার মোটিভ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, উদ্যানে তিনটি গ্রুপ মাদক ব্যবসা করে। একটি গ্রুপ তিন নেতার মাজার এলাকায়, একটি মাঝখানে এবং একটি ছবির হাটে।
গ্রেপ্তার আটজনই মেহেদীর গ্রুপের সদস্য এবং মেহেদী এই গ্রুপের দলনেতা বলে জানান তিনি। ঘটনার দিন একটি কালো ব্যাগে করে মেহেদী সুইস গিয়ার নিয়ে আসেন এবং বাকিদের সরবরাহ করেন।
সাম্যের শরীরের যেসব স্থানে আঘাত করা হয়েছে তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর—তাই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার মূল আসামিকে রিমান্ডে এনে হত্যাকাণ্ডের পেছনের মোটিভ উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন সাম্যের বড় ভাই সরদার আমিনুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'পুলিশ আমাদের সংবাদ সম্মেলনের কথা জানায়নি। পত্রিকায় খবর দেখে এসেছি। পুলিশ বলছে ঘটনাটি "হিট অব দ্য মোমেন্ট"-এ ঘটেছে।
'সংবাদমাধ্যমে এসেছে, ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া এক আসামি বলেছে, হত্যার পর মূল আসামিকে বাইকে করে উদ্যানে পার করে দেওয়া হয় এবং সে আরেকটি গ্রুপের সঙ্গে চলে যায়।'