সচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কাল, দেশজুড়ে কর্মসূচির ডাক

'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' বাতিলের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো সচিবালয়ে আজ সোমবারও বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। বেলা আড়াইটার দিকে কর্মসূচি শেষ করে আগামীকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) আবারও বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
আজ কর্মসূচি থেকে সচিবালয়ের বাইরে দেশের সব সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদেরও একই কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়।
সচিবালয়ের সব কর্মচারী সংগঠন একত্র হয়ে 'বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম' নামে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কাল সকাল ১০টায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় জমায়েত হবেন তারা।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবীর বলেন, 'অধ্যাদেশ পুরোপুরি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।' তিনি জানান, আজ অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে একটি বৈঠকের কথা থাকলেও রাষ্ট্রীয় ব্যস্ততার কারণে সেটি হয়নি। নতুন সময় নির্ধারণ হলে তা সাংবাদিকদের জানানো হবে।
অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে আজ সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের ভেতরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভরত সচিবালয়ের ভেতরে মূল গেটের অবস্থান নেন কর্মচারীরা। এ সময় মূল গেটটি বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা। তবে এর আধঘণ্টা পর বেলা ১টার দিকে গেট খুলে দেওয়া হয়।
এর আগে এ অধ্যাদেশ জারির প্রতিবাদে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষোভ করতে পারেন, এমন আশঙ্কায় সচিবালয়ের নিরাপত্তার জোরদার করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সচিবালয়ে।

অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েকদিন ধরেই সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দাবি পূরণ না হলে আজ সচিবালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা।
ইউএনবির প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিন বেলা পৌনে ১১টা দিকে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়।
পরে বেলা ১১টার দিকে তাদের সঙ্গে নূরুল ইসলাম ও মুজাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পরিষদের অপর অংশও যুক্ত হয়।
এ সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বিক্ষোভে অংশ নিতে কাজ ফেলে নিচে নেমে এসেছেন। অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
এর আগে সংযুক্ত পরিষদের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা হবে এবং এটা যদি মাঠে নেমে, দফতরের দাঁড়িয়ে না করা যায়, তাহলে আদালতের দ্বারস্থ হবেন কর্মকর্তারা। সরকার এভাবে একটি আইনকে নিবর্তনমূলক করতে পারে না।'
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদের মধ্যেই গতকাল রোববার সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে 'সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' জারি করেছে সরকার।

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারীর 'অসদাচরণ' প্রমাণিত হলে কেবল নোটিশ জারির মাধ্যমেই তাকে নিম্নপদ বা নিম্নবেতন গ্রেডে অবনমিত, চাকরি থেকে অপসারণ অথবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করা যাবে।
এদিকে বিক্ষোভরভ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
রোববার সচিবালয়ে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া কর্মচারীদের একটি সংগঠনের নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'সরকারের উচিত ছিল নিবর্তনমূলক আইন করার আগে, মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশে ওঠার আগে আলোচনা করা। সেটি না করে সরকার এককভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মচারীদের এ ধরনের আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শক্ত অবস্থান নিতে আইনে এই পরিবর্তন আনল। এই আইনের ফলে সরকারি চাকরিজীবীরা জোটবদ্ধভাবে দাবি-দাওয়া করতে পারবেন না। সমাবেশে অংশগ্রহণ, জরুরি হলেও ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। ফলে অধস্তনরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া পর্যালোচনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মতামত, সুপারিশ দেওয়া সংক্রান্ত 'সরকারি কর্মচারীগণের দাবি-দাওয়া পর্যালোচনা সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি' পুনর্গঠন করেছে।