ড. ইউনূসের মাঝপথে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই: জোনায়েদ সাকি

ড. ইউনূসের মাঝপথে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।
তিনি বলেন, 'ড. ইউনূসকে যেহেতু জনগণ একটা ভরসার জায়গায় রেখেছেন, সে কারণে তাকেই এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। ড. ইউনূসের মাঝপথে চলে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা মনে করি, আপনার [ড. ইউনূস] উপর যত চাপই থাকুক না কেন আপনি যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তা পালন করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন।'
রবিবার (২৫ মে) প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় জোনায়েদ সাকি বলেন, 'এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নানা জায়গায় যেই অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব তৈরি হচ্ছে; যা কি-না একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এই অনাস্থার জায়গা থেকে এবং দূরত্বের জায়গাটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে।'
তিনি বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে হবে। পাশাপাশি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গভীর আলাপ-আলোচনা দরকার।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা আজ আমাদের পক্ষ থেকে বলেছি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যেখানে একদিকে হত্যাকারীদের বিচার এবং জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার জন্য গণতান্ত্রিক সংস্কারে যাওয়ার প্রয়োজন। এতে যে দায়িত্ব নেওয়া দরকার সেটা আপনার সরকারকেই নিয়ে যেতে হবে। অন্যথায় আর কোনো সুযোগ নাই।'
জোনায়েদ সাকি বলেন, 'আমরা প্রধান উপদেষ্টা কে বলেছি জনগণ একটা দৃশ্যমান বিচার দেখতে চায়। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, সকারের পক্ষ থেকে বিচারবিভাগকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। বিচারব্যবস্থা যে গতিতে এগোচ্ছে সেখানে যাতে কোন দীর্ঘ না হয় এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকে সে বিষয়ে তিনি আশা ব্যক্ত করেছেন।'
নির্বাচন ইস্যুতে তিনি বলেন, 'সরকার বলেছেন যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে আমরা বলেছি এ বিষয়ে যদি একটি সুনির্দিষ্ট সময় বলা যায়, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো একটি প্রস্তুতি নিতে পারবে। এছাড়া অনেকে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে, নির্বাচনের যদি একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ না থাকে তাহলে সেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না।'
তিনি আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার বারবার বলেছেন, যে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। জুনের ৩০ তারিখের মধ্যে নির্বাচন হবে, এর একদিনও বাইরে যাবে না। পাশাপাশি আরও বলেছেন যে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে সে প্রতিষ্ঠানগুলো যখন পরিপূর্ণভাবে কাজ করা শুরু করবে তখনই তারা নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবেন এবং প্রশাসনকে গোছানোর পরেই তারা সিদ্ধান্ত নিবেন যে নির্বাচনটা কবে নাগাদ সুনির্দিষ্ট ভাবে দেওয়া যায়।'
বিএনপি তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ চেয়েছে এ বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'জুলাই আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী তিনজন এখানে উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন, তার মধ্যে একজন একটা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। বাকি দুইজন উপদেষ্টা এখনও বিদ্যমান। আমরা বলেছি, বাকি যে দুইজন আছেন, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিকল্পনা আছে কি-না? যদি থাকে তাহলে তাদের একটা সময় এখান থেকে সরে যেতে হবে। যেহেতু এটার রাজনৈতিকভাবে গঠিত সরকার না তাই রাজনৈতিক মোটিভ নিয়ে এখানে থাকাটা নিয়ম অনুযায়ী ঠিক হবে না।'
গণসংহতি আন্দোলনের শীর্ষ এই নেতা বলেন, 'আমরা মনে করি বাংলাদেশ একটা জাতীয় পুনর্গঠনের কালে আছে। আমাদের এখানে জাতীয় নির্বাচনটাই মুখ্য, তাই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটা রোডম্যাপ হওয়া প্রয়োজন। তবে এক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচন পরে হলেও সমস্যা নেই।'
প্রধান উপদেষ্টা কোনোভাবেই তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না: মান্না
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, 'প্রধান উপদেষ্টা কোনোভাবেই তার ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চান না এবং তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সময় আর বাড়াতে চান না। এপ্রিলের পর নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি আশ্বস্ত করেছেন।'
তিনি বলেন, 'আমরা সংস্কারের বিষয়ে কিছু বলছি না, আমরা শুধু চাই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি এতদিন যা করেছি তা সবকিছুই ব্যর্থ হয়ে যাবে; যদি না সবাই আমার সঙ্গে একমত হয়- প্রধান উপদেষ্টার এরকম ধারণা ছিল। তখন আমরা তাকে বুঝিয়েছি আপনার বেশি করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে হবে, কথা বলতে হবে, মতবিনিময় করতে হবে। আপনি কেমন করে নির্বাচন করতে চান তা সকলের সঙ্গে শেয়ার করবেন।'
মান্না বলে বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে জুনের পর কোনোভাবেই আর সময় গড়াবে না। প্রয়োজনে আমি পদত্যাগপত্র লিখে রাখব।'