শিল্প ও জ্বালানি সংকট: ‘১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবীদের মতোই উদ্যোক্তাদের হত্যা করা হচ্ছে’: বিটিএমএ সভাপতি

শিল্পখাতে বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট এবং এর পেছনে 'ষড়যন্ত্রের' অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীদের ১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবীদের হত্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
তিনি বলেন, 'আমার শিল্প নিয়ে কথা বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে ১৯৭১ সালে। যেভাবে তখন দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছে, আজ ২০২৫ সালে এসে একইভাবে আমাদের শিল্প উদ্যোক্তা ও শিল্পকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে।'
আজ (শনিবার) রাজধানীতে চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট নিয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শওকত আজিজ রাসেল। সম্মেলনে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, এলএফএমইএবি, বিসিআই ও আইসিসি-বাংলাদেশ প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। শওকত আজিজ অ্যাম্বার গ্রুপের চেয়ারম্যানও।
তিনি বলেন, 'সংকটের কারণে অধিকাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা জানি না, সামনে কোরবানির ঈদে কীভাবে শ্রমিকদের বোনাস ও বেতন দেব। আমি মনে করি, এটি আমাদের শিল্পের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। অথচ আমরা গ্যাস বিল, ব্যাংকের কিস্তি—সবই দিচ্ছি।'
বিটিএমএ সভাপতি আরও বলেন, 'এখন শিল্পে প্রতিদিন লে-অফ হচ্ছে। মানুষ কয়েকদিন পর রাস্তায় নামবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। যদি শিল্পকে এই জ্বালানি সংকট থেকে বাঁচানো না যায়, তাহলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।'
তিনি ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, 'সুদের হার অনেক বেশি। কেন? কারণ, যারা টাকা লুট করেছে, তাদের খেসারত দিচ্ছি আমরা।'
বিনিয়োগ পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, 'গত আট মাসে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) একজন বিনিয়োগকারীও আনতে পারেনি। বিদেশিদের আমরা বলছি আসতে, কিন্তু একটি কারখানা তৈরি করে উৎপাদনে আসতে পাঁচ বছর সময় লাগে। বিদেশিরা জানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ লাভজনক নয়। তারা জানে, ভিয়েতনাম বাংলাদেশের চেয়ে লাভজনক।'
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আনোয়ার-উল-আজিম চৌধুরী পারভেজ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান অচলাবস্থা এবং শিল্প খাতের নানা সংকট নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, 'নতুন একটা সমস্যা হয়েছে—এনবিআর। এখন এনবিআর, কাস্টমস কোনোটাই কাজ করছে না।'
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের সরকারি ছুটি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, 'দশদিন ছুটি দিলে আমরা চলব কীভাবে? সরকার কীভাবে এমন দীর্ঘ ছুটি ঘোষণা করে? একটা দিন ছুটিও আমাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।'
তিনি আরও বলেন, 'এই দশদিনের ছুটির বিষয়ে সরকার আমাদের বলে ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করতে! এটা কেমন সরকার? আদৌ এটা সরকার কিনা, বোঝা যাচ্ছে না। খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সরকার যদি শিল্প না-ই চায়, তাহলে আমাদের জেলে পাঠানোর দরকারটা কী?'
গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে চেম্বার সভাপতি বলেন, 'কি করব, কিভাবে করব—এই নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সরকার বারবার বলেছে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু আশ্বাসই পেলাম, বাস্তবে কিছুই পেলাম না।'
তার মতে, 'শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে প্রতিদিন ১৫০-২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'সাভার, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় ১৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের প্রতিশ্রুতি সরকার কয়েক সপ্তাহ আগেই দিয়েছিল। পাশাপাশি অতিরিক্ত এলএনজি কার্গো থেকে আরও ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের কথাও বলা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি।'
চলমান অর্থনৈতিক সংকটে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়া এবং শিল্প উৎপাদন ৬০ শতাংশে নেমে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন পারভেজ।
তিনি বলেন, 'আমাদের বলা হচ্ছে, ঈদুল আজহার আগে কর্মীদের বেতন দিতে হবে। সরকার আমাদের গ্রেপ্তার করার হুমকি দিচ্ছে।'
চাপ থাকা সত্ত্বেও গ্যাস সরবরাহ মাত্র ১-২ পিএসআই হওয়ার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, 'গ্যাস দেবে না, সুদের হার বাড়াবে, তারপরও গ্যাস বিল দিতে হবে। ব্যাংকের ঋণের কিস্তিও দিতে হবে। অথচ কারখানায় উৎপাদনই বন্ধ হয়ে গেছে।'