ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ঘোষণা করে ইসি’র গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের রায় আজ

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট স্থগিতের আবেদন করা একটি রিটের আদেশ আজ বুধবার (২১ মে) দেওয়ার কথা রয়েছে হাইকোর্টের।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) শুনানি শেষে আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন।
শুনানিতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি, যেখানে আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে। এরপর তাপস শপথ গ্রহণ করেন এবং তখন থেকেই তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে শেখ ফজলে নূর তাপস পেয়েছিলেন চার লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইশরাক হোসেন পেয়েছিলেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ভোট।
নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ইশরাক হোসেন ২০২০ সালের ৩ মার্চ আদালতে একটি মামলা করেন, যাতে তিনি ফলাফল বাতিলের আবেদন জানান।
গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর, দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়।
তখন থেকে অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, ২৭ মার্চ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ২০২০ সালের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করে প্রকাশিত ফলাফল বাতিল করেন এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে।
গেজেট প্রকাশের দিনই, রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশীদ নামে দুই ব্যক্তি ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ঘোষণা করা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আইনগত নোটিশ দেন।
নোটিশে গেজেট প্রকাশ থেকে বিরত থাকা এবং ইশরাকের শপথ গ্রহণ না করার আহ্বান জানানো হয়।
তাদের আইনজীবী বলেন, রায়টি তড়িঘড়ি করে দেওয়া হয়েছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, 'আমরা ভেবেছিলাম নির্বাচন কমিশন এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে। কিন্তু তারা তা করেনি। সংবাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আইন বিষয়ক উপদেষ্টা বলেছেন যে, আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত চাওয়া হলেও তা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এমন আদেশ দিতে পারে না যার কোনও বৈধতা নেই। কারণ, মেয়াদের সময় ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে এবং একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।'
পরবর্তীতে মামুনুর রশীদ হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। এতে ২৭ মার্চের রায় ও ২৭ এপ্রিলের গেজেটকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ইশরাক হোসেনকে শপথ নিতে বাধা দিতে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না—এই মর্মে রুল জারির আবেদন করা হয়।
রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উক্ত রায় ও গেজেট স্থগিত রাখার আবেদনও করা হয় রিটে।
এদিকে, ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ নেওয়ার দাবিতে নগর ভবনে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেছেন।
তারা গত কয়েক দিন ধরেই এসব কর্মসূচি পালন করে আসছেন।