বন্দর পরিচালনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সিদ্ধান্তে সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে: সেলিম রায়হান

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্ত সম্প্রতি দেশে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সৃষ্টি করেছে, উল্লেখ করে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এর নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, বিদেশি অংশগ্রহণে বিনিয়োগ ও দক্ষতা আসতে পারে, যা নিঃসন্দেহে প্রয়োজন। তবে এ ধরনের কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে একটি বিস্তৃত ও সুপরিকল্পিত কৌশলের প্রয়োজন, যেখানে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা হবে।
আজ সোমবার (১৯ মে) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সেলিম রায়হান এবিষয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরেছেন।
সেখানে তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা শুধু বন্দর কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভর করে না। চট্টগ্রাম বন্দরের মূল পরিচালনাকারী সরকারি সংস্থা হলো চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ), যা নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। এছাড়া, বন্দরের অভ্যন্তরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কাস্টমস বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি সংস্থাও বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত। পাশাপাশি বেসরকারি খাত—যেমন কনটেইনার পরিচালনা, নিরাপত্তা, পণ্য হ্যান্ডলিং, শিপিং এজেন্ট, কার্গো এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাররাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে, চট্টগ্রাম বন্দরের সংস্কার ও উন্নয়ন পরিকল্পনা হতে হবে সামগ্রিক, যাতে সব পক্ষের কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিত হয়।'
সেলিম রায়হান বলেন, জুলাইয়ের ঘটনার পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার স্থিতিশীলতা রক্ষা, সুশাসন ও একটি সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কিছু প্রয়োজনীয় সংস্কার উদ্যোগ নিতে পারে—এ রকম একটি ম্যান্ডেট রয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর যেমন একটি কৌশলগত খাত, সেখানে সংস্কার প্রক্রিয়া আরও সতর্ক ও পরিপূর্ণ পরামর্শের ভিত্তিতে হওয়া উচিত। কিছু সিদ্ধান্ত হয়তো জরুরি, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি গ্রহণযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে স্বচ্ছতা, অংশীজনের পরামর্শ ও রাজনৈতিক ঐকমত্য অপরিহার্য। অংশগ্রহণমূলক সংস্কারের ভিত্তি তৈরি না হলে— সেই সংস্কার টেকসই হবে না।
তাঁর মতে, এই প্রেক্ষাপটে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা জরুরি। রাজনৈতিক দলসহ সব প্রধান অংশীজনদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হলে— তাদের মতামত জানা যাবে এবং সংস্কারে সমর্থন পাওয়া সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ও লজিস্টিক খাতের উন্নয়নের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা দরকার, যেখানে বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের ভূমিকা নির্ধারিত থাকবে—তারা যেন স্থানীয় দক্ষতাকে প্রতিস্থাপন না করে, বরং তার সম্পূরক হিসেবে কাজ করে।
'এই পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। সব ধরনের চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে, যাতে তার শর্তাবলী পর্যালোচনা করা যায় এবং জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে। কেবল এই ধরনের অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব যে, চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন হবে টেকসই এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে শক্ত ভিত্তি দেবে, জাতীয় স্বার্থকে বিঘ্নিত না করে'- যোগ করেন তিনি।